আতঙ্ক! পানীয় জল থেকে ফ্লুওরাইড সরাতে চান স্বাস্থ্য সচিব

যুক্তরাষ্ট্রে জনসাধারণের পানীয় জলে ফ্লোরাইড মেশানোর সুপারিশ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন দেশটির স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে, কেনেডি এই বিষয়ে সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-কে ব্যবস্থা নিতে বলবেন।

একইসঙ্গে, পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (EPA) পানীয় জলে ফ্লোরাইডের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এই ঘটনাপ্রবাহ এমন এক সময়ে ঘটছে যখন দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ফ্লোরাইড মেশানো নিয়ে বিতর্ক চলছে।

সম্প্রতি, ইউটা রাজ্য তাদের পানীয় জলে ফ্লোরাইড মেশানো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ডেন্টিস্ট ও স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন এর বিরোধিতা করলেও, কেনেডি ইউটাকে এই সিদ্ধান্তের জন্য প্রশংসা করেছেন।

তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ “আমেরিকাকে পুনরায় সুস্থ করে তোলার” একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ফ্লোরাইড হলো একটি খনিজ যা দাঁতকে মজবুত করতে এবং ক্ষয়রোধ করতে সাহায্য করে।

CDC-এর মতে, এটি দাঁতের এনামেলের ক্ষয় পূরণ করে এবং ক্যাভিটি বা দাঁতের গর্তের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।

১৯৫০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার পানিকে ফ্লোরাইড যুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে।

১৯৬২ সালে, পানির সাথে কী পরিমাণে ফ্লোরাইড মেশানো হবে, সে বিষয়ে একটি গাইডলাইনও তৈরি করা হয়।

বর্তমানে, EPA-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতি লিটার পানিতে ফ্লোরাইডের পরিমাণ ৪ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।

CDC-এর সুপারিশ হলো, প্রতি লিটারে ০.৭ মিলিগ্রাম ফ্লোরাইড মেশানো যেতে পারে।

তবে, কেনেডি ফ্লোরাইডকে একটি “বিপজ্জনক নিউরোটক্সিন” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তাঁর মতে, এটি আর্থ্রাইটিস, হাড়ের দুর্বলতা এবং থাইরয়েড-এর মতো স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কিছু গবেষণায় এই ধরনের ঝুঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিশেষ করে, অতিরিক্ত ফ্লোরাইডের কারণে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার (IQ) ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হয়।

যদিও আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (American Dental Association) দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, পানির সাথে ফ্লোরাইড মেশানো দাঁতের ক্ষয়রোগ কমাতে সহায়ক।

তারা বিষয়টির আরও ভালো গবেষণার জন্য প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে ফ্লোরাইডযুক্ত পানি সরবরাহ করা হয়।

দেশটির প্রায় ৫১,০০০ জল সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে ১৭,০০০-এ ফ্লোরাইড মেশানো হয়।

তবে, অতিরিক্ত ফ্লোরাইডের কারণে দাঁতে দাগ হওয়া এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা হতে পারে বলেও কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে।

গত বছর, ফেডারেল সরকারের ন্যাশনাল টক্সিকোলজি প্রোগ্রাম (National Toxicology Program) একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যে সব শিশুরা ১.৫ মিলিগ্রামের বেশি ফ্লোরাইডযুক্ত পানি পান করে, তাদের মধ্যে কম আইকিউ-এর প্রবণতা দেখা যায়।

বাংলাদেশে সাধারণত পানির সাথে ফ্লোরাইড মেশানো হয় না।

তবে, এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি নির্ধারকদের জন্য ফ্লোরাইডের ব্যবহার এবং এর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।

ভবিষ্যতে যদি কখনো এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে বিস্তারিত গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *