যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে একটি চাঞ্চল্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন দেশটির স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের (Health and Human Services – HHS) সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র। তিনি সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর ভ্যাকসিন বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির (Advisory Committee on Immunization Practices – ACIP) সকল সদস্যকে অপসারণ করেছেন।
সোমবার (স্থানীয় সময়) এই ঘোষণা আসে। জানা গেছে, সাধারণত এই কমিটি ভ্যাকসিনের সময়সূচী এবং টিকাদান কর্মসূচী সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
কেনেডি জুনিয়রের মতে, এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত (conflict of interest) রয়েছে এবং স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এই কমিটি মূলত ১৭ জন বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে চিকিৎসক, এপিডেমিওলজিস্ট (রোগতত্ত্ববিদ), এবং ইমিউনোলজিস্টরা (রোগ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ) অন্তর্ভুক্ত থাকেন। সাধারণত এই কমিটির সদস্যরা চার বছরের জন্য নিয়োগ পান।
তবে, এমনভাবে পুরো প্যানেল ভেঙে দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। কেনেডি জুনিয়রের এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
কেনেনডি জুনিয়র তাঁর নিবন্ধে উল্লেখ করেন যে, বিদায়ী কমিটির অনেক সদস্যকে বাইডেন প্রশাসন “শেষ মুহূর্তে” নিয়োগ দিয়েছিল। তাঁর মতে, বর্তমান সদস্যদের অপসারণ না করলে ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৮ সাল পর্যন্ত নতুন সদস্য নিয়োগ করতে পারত না।
তবে, তাঁর এই যুক্তির সঙ্গে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কমিটির সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত হন না।
তারা তাদের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। এই প্রেক্ষাপটে, কেনেডি জুনিয়রের এই পদক্ষেপের কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিগুলোতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে, ভ্যাকসিন বিষয়ক সুপারিশগুলোতে নতুনত্ব আসতে পারে।
এরই মধ্যে, আগামী ২৫ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত সিডিসি-র কোভিড-১৯, আরএসভি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইচপিভি এবং মেনিনজোকক্কাল রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকাদান বিষয়ক একটি বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, নতুন উপদেষ্টা প্যানেল গঠন করে এই সময়ের মধ্যে বৈঠকটি সম্পন্ন করা যায় কিনা।
তবে, কেনেডি জুনিয়রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনেকে মুখ খুলেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভ্যাকসিনের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেবে এবং টিকাদান কর্মসূচীকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ড. ব্রুস এ স্কট এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেবে, যা অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছে। এছাড়াও, আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্সের প্রেসিডেন্ট ড. সুজান ক্রেসলি বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ পরিবারগুলোর মধ্যে আরও বেশি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।
এই পরিস্থিতিতে, এখন সবাই নতুন উপদেষ্টা প্যানেলের দিকে তাকিয়ে আছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্যানেলের সিদ্ধান্তগুলো দেশের স্বাস্থ্যখাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন