ভ্যাকসিন পরিবর্তন: আরএফকে জুনিয়রের সিদ্ধান্তে বিতর্কের ঝড়!

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সুপারিশ পরিবর্তনে ভুল তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। দেশটির গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ফেডারেল ভ্যাকসিন বিষয়ক সুপারিশমালায় পরিবর্তনের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে বিতর্কিত ও অপ্রকাশিত গবেষণাপত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের (Department of Health and Human Services – HHS) পক্ষ থেকে কংগ্রেসকে পাঠানো একটি নথিতে এই পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়। এই নথিতে এমন কিছু গবেষণা ও তথ্যের উল্লেখ ছিল যা হয় এখনো প্রকাশিত হয়নি, অথবা বিতর্কিত, অথবা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

মে মাসের শেষের দিকে, ভ্যাকসিন-বিরোধী হিসেবে পরিচিত রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) সুস্থ শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য প্রস্তাবিত টিকাদান তালিকা থেকে কোভিড ভ্যাকসিন বাদ দিয়েছে। একইসঙ্গে তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা হেলদি এগেইন’ এজেন্ডারও প্রশংসা করেন।

বেলার কলেজ অফ মেডিসিনের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. মার্ক টুরেন্টাইন এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বিষয়টি এতটাই অপ্রত্যাশিত যে, কংগ্রেস সদস্যদের কাছে এমন কিছু উপস্থাপন করাটা অত্যন্ত অপমানজনক। কারণ, কংগ্রেস সদস্যরা নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর উপর নির্ভর করেন, কিন্তু এখানে সেই নির্ভরযোগ্যতা পাওয়া যাচ্ছে না।”

অভিযোগ উঠেছে, কোভিড ভ্যাকসিনের কারণে হৃদরোগ, যেমন – মায়োকার্ডাইটিস (হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ) অথবা পেরিকার্ডাইটিস (হৃদয়-আবরণের প্রদাহ) হওয়ার সামান্য ঝুঁকি রয়েছে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, নতুন ভ্যাকসিন পদ্ধতিতে এই ধরনের জটিলতার সম্ভাবনা অনেক কমে এসেছে।

এছাড়াও, নথিতে এমন অনেক গবেষণা যুক্ত করা হয়নি যেখানে দেখা গেছে, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর, ভ্যাকসিন নেওয়া হোক বা না হোক, মায়োকার্ডাইটিস ও পেরিকার্ডাইটিসের ঝুঁকি ভ্যাকসিনের কারণে হওয়া ঝুঁকির চেয়ে বেশি।

এই বিষয়ে স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা গবেষণার বিকৃতি করছি না। এখানে অন্তর্নিহিত তথ্যগুলো তাদের নিজস্ব কথা বলছে এবং এতে বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে। আমরা তথ্য ও বিজ্ঞান অনুসরণ করব।”

আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্সের সংক্রামক রোগ বিষয়ক কমিটির প্রধান শন ও’লিয়ারির মতে, “এটা (কেনেডি)র পুরনো কৌশল। হয় ভালো বিজ্ঞান থেকে কিছু তথ্য তুলে নেওয়া, না হয় তার দাবির সমর্থনে দুর্বল গবেষণাকে ব্যবহার করা – এই কৌশল তিনি ২০ বছর ধরে অনুসরণ করে আসছেন।”

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা এবং ভ্যাকসিনের বিষয়ে সঠিক তথ্যের গুরুত্ব নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *