আরএফকে জুনিয়রের ভ্যাকসিন অভিযান: কতটা গুরুতর?

স্বাস্থ্যখাতে আলোচনার ঝড় তুলেছেন রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র (আরএফকে জুনিয়র)। আমেরিকার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন, যা জনসাধারণের মাঝে আগ্রহ তৈরি করেছে।

অন্যদিকে যেমন খাদ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো তার অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে, তেমনই ভ্যাকসিন বা টিকার নিরাপত্তা নিয়ে তার কিছু বিতর্কিত মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

আরএফকে জুনিয়রের ‘মেক আমেরিকা হেলদি এগেইন’ (MAHA) কর্মসূচি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো খাদ্য, ঔষধ এবং পরিবেশ—এই তিনটি প্রধান স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে জনগণের স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন আনা।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি কৃত্রিম রং ও অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার (ultra-processed foods) বন্ধ করার কথা বলছেন। স্কুলগুলোতে উন্নত মানের খাবার সরবরাহ এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি (SNAP) আরও কার্যকর করার বিষয়েও তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

তবে, আরএফকে জুনিয়রের সবচেয়ে বেশি সমালোচিত দিকটি হলো ভ্যাকসিন বা টিকার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি মনে করেন, কিছু ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে এবং শিশুদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

সম্প্রতি, তিনি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC)-এর উপদেষ্টা প্যানেল ভেঙে দিয়েছেন এবং সেখানে নিজের পছন্দের কিছু ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই পদক্ষেপের কারণে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন।

কারণ, এই প্যানেলের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়।

এছাড়াও, আরএফকে জুনিয়র ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের দায়মুক্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে চান। তার মতে, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের আইনি দায়বদ্ধতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বর্তমান ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ।

তিনি মনে করেন, এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পেতে সমস্যায় পড়েন।

অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো বিষয়গুলোতে আরএফকে জুনিয়রের আগ্রহ অনেকের কাছে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি খাদ্যপণ্যে ব্যবহৃত কৃত্রিম রং (artificial dyes) ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর কথা বলছেন।

তবে, তার এই পদক্ষেপগুলো কতটা সফল হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, খাদ্য কোম্পানিগুলো এখনো পর্যন্ত স্বেচ্ছায় কিছু পদক্ষেপ নিলেও, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর নির্দেশনা আসেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরএফকে জুনিয়রের কর্মসূচি বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক তার কাজগুলো অনেকের কাছে প্রশংসিত হলেও, ভ্যাকসিনের বিষয়ে তার বিতর্কিত মন্তব্যগুলো উদ্বেগের কারণ। অনেকে মনে করেন, এই দুটি ভিন্ন পথের মধ্যে সমন্বয় করা কঠিন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে এই পরিবর্তনগুলো কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে, আরএফকে জুনিয়রের এই পদক্ষেপগুলো নিঃসন্দেহে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং নীতি নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *