আতঙ্কের খবর! চালের মাঝে লুকিয়ে বিষ, শিশুদের বাঁচাতে এখনই জানুন!

ধানের বাজারে নীরব বিপদ: চালের মধ্যে আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়ামের উচ্চ মাত্রা, যা উদ্বেগের কারণ।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালে আর্সেনিক এবং ক্যাডমিয়ামের মাত্রা স্বাস্থ্যবিধির জন্য মারাত্মকভাবে বেশি। এই তথ্যটি বিশেষভাবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য এবং শিশুদের পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

গবেষণায় ১০০টির বেশি ব্র্যান্ডের চাল পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, অনেক চালে আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়ামের মাত্রা এতটাই বেশি যে তা ডায়াবেটিস, শিশুদের মানসিক বিকাশে সমস্যা, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস এবং হৃদরোগের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের ক্ষেত্রে এই দূষণ আরও উদ্বেগের কারণ। কারণ, শিশুদের শরীরে আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়ামের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। গবেষণা পরিচালক জেন হোলিহান জানিয়েছেন, “কম মাত্রায় হলেও আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়ামের কারণে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি থাকে।”

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) শিশুদের জন্য চালের সিরিয়ালে আর্সেনিকের মাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে, রান্না করা সাধারণ চালে আর্সেনিকের মাত্রা এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা হয়নি। হোলিহানের মতে, “বাচ্চাদের জন্য চালের সিরিয়ালের চেয়ে সাধারণ চাল আর্সেনিকের বেশি উৎস।”

আর্সেনিক একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা মাটি, জল এবং বাতাসে পাওয়া যায়। এর “ইনঅরগানিক” রূপটি সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত। এটি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর। এছাড়া, ক্যাডমিয়ামও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক। এটি কিডনি, হাড়, পাকস্থলী, ফুসফুস এবং আরও অনেক অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সাদা চালের চেয়ে বাদামি এবং কিছু বিশেষ অঞ্চলের চালে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি থাকে। ইতালির আরবোরিও চাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে উৎপাদিত সাদা চালেও আর্সেনিকের উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, ভারতীয় বাসমতি এবং থাইল্যান্ডের সুগন্ধি চালের মধ্যে আর্সেনিকের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

আর্সেনিক থেকে বাঁচতে রান্নার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন, চাল রান্নার আগে অতিরিক্ত জল ব্যবহার করে, সেই জল ফেলে দিলে আর্সেনিকের পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো যেতে পারে। এছাড়া, চাল রান্নার আগে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে আর্সেনিকের পরিমাণ আরও কমে।

তবে, শুধু চালের ওপর নির্ভর না করে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। অন্যান্য শস্য যেমন— বার্লি, ভুট্টা, ওটস, ইত্যাদি খাবারে আর্সেনিকের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। সবুজ শাকসবজি ও ফলমূলও খাদ্য তালিকায় যোগ করা যেতে পারে।

পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা গ্রিনল্যাটিনোসের প্রতিনিধি জুয়ান রবার্তো মাদ্রিদ মনে করেন, “আমাদের জানতে হবে আর্সেনিক শিশুদের শরীরে কী ক্ষতি করে এবং এর থেকে বাঁচার উপায় কী। এটা আতঙ্কের বিষয় নয়, বরং সচেতন হওয়ার সময়।”

এই বিষয়ে খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের আরও নজর দেওয়া উচিত। ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়াতে এবং খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও নিরাপদ করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *