আমেরিকার পথে: দুই যুবকের জীবন, রবিন ডি পয়ের ক্যামেরায়!

**মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রান্তিক জীবন: ডেরেক ও কুইন্টিনের গল্প**

ছবি তোলার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন এমন একজন ডাচ আলোকচিত্রী হলেন রবিন দে পুই। একবার তিনি আমেরিকাতে গিয়ে সেখানকার প্রান্তিক মানুষের জীবন ক্যামেরাবন্দী করেন। তেমনই এক ছবি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে, যেখানে দেখা যায় দুই যমজ ভাই – ডেরেক ও কুইন্টিন-কে।

**অজানা আমেরিকায় যাত্রা**

২০১৫ সালে রবিন দে পুই প্রথমবার আমেরিকা ভ্রমণে যান। উদ্দেশ্য ছিল, দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের জীবন ক্যামেরাবন্দী করা। হার্লে-ডেভিডসন মোটরসাইকেল চালিয়ে তিনি প্রায় ৮,০০০ মাইল পথ পাড়ি দেন। বাণিজ্যিক কাজের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে এবং নিজের সৃজনশীলতাকে নতুন পথে চালিত করতেই এই ভ্রমণ।

আমেরিকার জীবনযাত্রা অনেক কঠিন, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। দে পুই তাদের জীবনকে তুলে ধরতে চেয়েছেন, যারা প্রতিনিয়ত টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। ছবি তোলার মাধ্যমে তিনি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান বিভেদ দূর করতে এবং সবার মধ্যেকার সাধারণ বিষয়গুলো তুলে ধরতে চেয়েছেন।

**ইন্ডিয়ানার জঙ্গলে দুই ভাইয়ের বাস**

২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে, রবিন দে পুই তার স্বামীর সঙ্গে মিলে ‘আমেরিকান’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ করেন। এই সময়টাতে বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণকালে তিনি সেখানকার মানুষের ছবি তোলেন এবং তাদের জীবন-সংগ্রামের গল্প ক্যামেরাবন্দী করেন।

একদিন, ইন্ডিয়ানার এলখার্ট শহরে গাড়ি চালানোর সময় তিনি ডেরেক ও কুইন্টিনকে দেখতে পান। তাদের পরনে ছিল হুডি এবং মুখ ঢাকা ছিল। তাদের দেখে ছবি তোলার আগ্রহ জাগে দে পুইয়ের। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা যমজ ভাই এবং তাদের বয়স তখন ছিল ২৯ বছর। তারা একটি বন্ধুর বাড়ির পেছনের জঙ্গলে, একটি তাঁবুতে বসবাস করে।

তাদের মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো নয় এবং বাবা মারা গেছেন মাদকাসক্তির কারণে। তাদের বেড়ে ওঠায় সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছেন তাদের দাদিমা। কিন্তু একসময় তারা ঘর ছাড়ে এবং রাস্তায় থাকতে শুরু করে।

**কষ্টের মাঝেও ভালোবাসার সম্পর্ক**

তাদের জীবন কষ্টের হলেও, ডেরেক ও কুইন্টিন একে অপরের সঙ্গে সবসময় ছিল। তাদের শৈশব ভালো ছিল বলেই তারা জানায়। ছবিতে তাদের হাতে ট্যাটু দেখা যায়। কুইন্টিনের চোখের নিচে একটি তারা আঁকা ছিল। তাদের চামড়া ছিল সাদা, কারণ তারা টি-শার্ট পরত, কিন্তু ঘাড় ও হাতের কিছু অংশ রোদে পোড়া ছিল। তাদের গায়ের রং ও চুলের সঙ্গে মিল ছিল পেছনের কমলা রঙের ফুলের।

এই ছবি দেখে তাদের সম্পর্কে অনেক কিছুই অনুমান করা যায়। হয়তো তাদের দেখে দৌড়বিদ বা সাইক্লিস্ট মনে হতে পারে। ছবিটিতে অনেক কিছুই একসঙ্গে দেখা যায়, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করে।

**ফটোগ্রাফির মাধ্যমে সম্পর্কের গভীরতা**

রবিন দে পুই জানান, তিনি মিডিয়াম ফরম্যাট ক্যামেরা ব্যবহার করেন, যা মানুষের ত্বক ও চুলের টেক্সচার ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলে। ডেরেক ও কুইন্টিন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির প্রতি আগ্রহী ছিল। ছবি তোলার সময় তাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া ছিল চমৎকার। এটি ছিল তাদের মধ্যেকার সহযোগিতার ফল।

দে পুইয়ের ভাষায়, ছবি তোলার এই কাজটি তাকে ক্লান্ত করলেও, এটি তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ছবি তোলার মাধ্যমে তিনি নিজের একটি পরিবার তৈরি করেছেন। প্রথম আমেরিকা ভ্রমণের সময় র‍্যান্ডির সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। এমনকি ডেরেক ও কুইন্টিনের সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়, যাদের তিনি খুব ভালোবাসেন।

**রবিন দে পুইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি**

রবিন দে পুই ১৯৮৬ সালে নেদারল্যান্ডসের ওস্টফ্লাকিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রটারডামের ফটো একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তার কাজের অনুপ্রেরণা হলেন মেরি এলন মার্ক, এগন শিয়েলে, ডেভিড লিঞ্চ, রিচার্ড অ্যাভেডন, ল্যারি ক্লার্ক এবং হারমনি কোরিন।

তার উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে, আন্তর্জাতিক এমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হওয়া একটি প্রামাণ্যচিত্র। এছাড়া, তিনি তার তোলা ছবি নিয়ে ‘আমেরিকান’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *