বোলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে জয়ী হয়েছেন অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত মধ্যপন্থী রাজনীতিক রদ্রিগো পাস। গত কয়েক মাস আগেও তিনি ছিলেন সিনেটর, কিন্তু নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট হোর্হে ‘টুতো’ কুইরোগাকে পরাজিত করে আগামী ৮ নভেম্বর তিনি দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
৫৮ বছর বয়সী পাস, যিনি এর আগে তার বাবার পরিচয়ের সূত্রে পরিচিত ছিলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করে মূলত দেশটির গত দুই দশকের বামপন্থী শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন। ইভো মোরালেসের নেতৃত্বাধীন ‘সোশ্যালিজম মুভমেন্ট’ পার্টির শাসনামলে দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছিল, তবে পরবর্তীতে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি কমে যাওয়ায় তাদের অর্থনৈতিক মডেল মুখ থুবড়ে পড়ে।
ভর্তুকি এবং নির্দিষ্ট বিনিময় হারের কারণে ডলার সংকট দেখা দেয় এবং জ্বালানি ঘাটতির কারণে জনগণের মধ্যে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভোটাররা তাদের অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে পাসকে বেছে নেয়। পাস যদিও কুইরোরার মতো দ্রুত সংস্কারের পক্ষে ছিলেন না, তবে তিনি ধীরে ধীরে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
রদ্রিগো পাসের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল তার বাবার দল থেকে। পরে তিনি নিজেও রক্ষণশীল হয়ে ওঠেন এবং ব্যবসার অনুকূল সংস্কারের ওপর জোর দেন। তিনি প্রথমে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে আইনপ্রণেতা ছিলেন এবং পরে তার শহর তারিহার মেয়র হন। মেয়র থাকাকালীন সময়ে তিনি শহরের আধুনিকায়নে কাজ করেন, তবে এতে অনেক শ্রমিক শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
নির্বাচনের আগে, পাসের প্রচারণা তেমন একটা আলোচনায় ছিল না। এমনকি বিতর্কের প্রথম পর্বে তার নাম শোনা যায়নি। প্রচারণার শুরুতে জনমত জরিপেও তিনি ছিলেন বেশ পিছিয়ে। তবে সাবেক পুলিশ ক্যাপ্টেন এডমান লারার সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে তিনি দ্রুত নির্বাচনী বৈতরণী পার হন।
লারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, যা ভোটারদের কাছে পাসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। তারা সাধারণ মানুষের কাছে ‘সবার জন্য পুঁজিবাদ’ এই বার্তা নিয়ে হাজির হন এবং তাদের প্রচারণায় কুইরোরার বিশাল নির্বাচনী তহবিলের বিপরীতে সাদাসিধে কৌশল গ্রহণ করেন।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর পাস যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন। এই পরিবর্তনের ফলে, ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা বলিভিয়ার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। সে সময় মোরালেস মার্কিন মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনকে বহিষ্কার করেছিলেন এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।
এরপর থেকে বলিভিয়া ভেনেজুয়েলা এবং চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাসের বিজয় দুই দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তারা অবৈধ অভিবাসন বন্ধ, দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস