রোমানিয়ার আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে বাইসাইকেল ভ্রমণ হতে পারে চমৎকার এক উপায়। দেশটির ঐতিহাসিক গ্রাম, দুর্গ এবং আঙুর বাগানগুলোর মাঝে সাইকেল চালিয়ে অনায়াসে ঘুরে আসা যায়।
সম্প্রতি ইউরোপ ভ্রমণ বিষয়ক একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটাই জানা যায়।
বুখারেস্টের একটি উষ্ণ দুপুরে, রোমানিয়ান রোজ ওয়াইন হাতে নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলাপকালে লেখক মার্তা বাটারফিল্ডের সাথে পরিচিত হন।
মার্তা একজন ৮০ বছর বয়সী নারী, যিনি তাঁর ভাই সিডনি রবিনসন ও স্বামী জর্জ বাটারফিল্ডের সাথে মিলে ‘বাটারফিল্ড অ্যান্ড রবিনসন’ নামের একটি ভ্রমণ সংস্থা তৈরি করেছেন।
ষাটের দশকে ভিয়েনা থেকে প্যারিস পর্যন্ত সাইকেল ভ্রমণের পরিকল্পনা করার মধ্যে দিয়ে এই সংস্থার পথচলা শুরু হয়।
জর্জ বাটারফিল্ড বর্তমানে বিশ্বের অনাবিষ্কৃত স্থানগুলোতে ভ্রমণের ওপর জোর দিচ্ছেন।
তাঁর নতুন গন্তব্য হলো রোমানিয়া।
এখানে রয়েছে বিভিন্ন রঙের স্যাক্সন গ্রাম, গথিক দুর্গ, মধ্যযুগীয় শহর ও বনাঞ্চল।
সাধারণত, বাটারফিল্ড অ্যান্ড রবিনসনের ভ্রমণ তালিকায় ফাইভ-স্টার সুযোগ-সুবিধা থাকে।
সম্প্রতি ‘বেথলেন এস্টেটস’ ও ‘ম্যাটকা’র মতো নতুন জায়গা তৈরি হওয়ায় জর্জ সেখানে আকর্ষণীয় ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছেন।
পর্যটকদের একটি দল নিয়ে জর্জ ও মার্তা বুখারেস্ট থেকে তাদের সাইকেল যাত্রা শুরু করেন।
এরপর তারা ওয়াইন কান্ট্রি ঘুরে ট্রান্সিলভেনিয়ার দিকে যান।
জর্জ এই ভ্রমণের শুরুতে বলেছিলেন, “আসুন, আবিষ্কারের এক সপ্তাহ উপভোগ করি।”
এই ভ্রমণে আসা অ্যান্ডি গ্লিম্যান নামের একজন জানান, জর্জের সঙ্গে এটি তাঁর একাদশ ভ্রমণ।
ভ্রমণের প্রথম দিকে, দলটি ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।
দুপুরের খাবারের পর, ‘বিয়ন্ড ড্রাকুলা’র রালুকা স্পিয়াক দলটিকে ১৯৪৮ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত রোমানিয়ার কমিউনিস্ট শাসনের সময় সম্পর্কে ধারণা দেন।
তিনি তাদের ‘ফেরেসট্রোইকা’ নামের একটি অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যান, যা ১৯৮০-এর দশকের একটি টাইম ক্যাপসুলের মতো।
এরপর দলটি রোমানিয়ার শেষ কমিউনিস্ট শাসক নিকোলাই ও ইলেনা চাউসেস্কুর প্রাসাদ পরিদর্শন করেন, যা ছিল আড়ম্বরপূর্ণ।
পরে, দলটি দেলু মারে অঞ্চলের আঙ্গুর বাগানগুলোতে সাইকেল চালান।
এই অঞ্চলের ‘ফ্যেতেস্কা নেয়াগ্রা’ নামের একটি বিশেষ জাতের আঙুর সম্পর্কে তারা জানতে পারেন।
এরপর তারা ব্রাসভ শহরে যান।
এখানে রয়েছে ব্ল্যাক চার্চের মতো ঐতিহাসিক স্থান, আধুনিক ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট।
পরের দিনগুলোতে, পর্যটকরা স্যাক্সন গ্রামগুলোতে সাইকেল চালিয়ে ভ্রমণ করেন।
তারা আলমা ভাই গ্রামের একটি চার্চ পরিদর্শন করেন, যা ১৩ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এখানে স্থানীয় কারুশিল্পীরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী কাজগুলো প্রদর্শন করেন।
ভ্রমণের সময় পর্যটকরা স্থানীয় খাবার উপভোগ করেন।
স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে তারা ওভেন-বেকড বেগুন এবং রিকোট্টা-জাতীয় উরদা চিজের সাথে ভাজা মসুর ডালের স্বাদ গ্রহণ করেন।
এছাড়া, প্রত্যেক খাবারের সাথে ফল দিয়ে তৈরি ‘পালিনকা’ নামের এক ধরনের পানীয় পরিবেশন করা হয়।
ভ্রমণের শেষ দিকে, পর্যটকরা বেথলেন এস্টেটসে যান।
এটি ছিল কাউন্ট মিকলস বেথলেনের বাসস্থান।
তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর স্ত্রী কাউন্টেস গ্ল্যাডিস বেথলেন জায়গাটিকে রোমানিয়ার সবচেয়ে বিলাসবহুল স্থানে পরিণত করার জন্য কাজ করছেন।
এরপর পর্যটকরা জ্যাবালা এস্টেটে যান, যেখানে হাঙ্গেরীয় একটি পরিবারের মালিকানাধীন একটি সুন্দর হোটেল রয়েছে।
সেখানে তারা ঐতিহ্যবাহী হাঙ্গেরীয় খাবার, যেমন—গৌলাশ ও কিউর্তোস্কালাক্স উপভোগ করেন।
সাইকেল ভ্রমণ শেষে লেখক জানিয়েছেন, ভালো খাবার, ভালো ওয়াইন, বন্ধু এবং সুন্দর দৃশ্য—এগুলোই জীবনকে উপভোগ করার আসল উপায়।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার