**রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: কট্টর ডানপন্থী সিমিয়নের উত্থান, পশ্চিমাদের জন্য শঙ্কার কারণ?**
বুখারেস্ট, [আজকের তারিখ]। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্র রোমানিয়ার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এখন আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
সম্প্রতি বাতিল হওয়া নির্বাচনের পুণরায় আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক জর্জে সিমিয়নের জয়লাভের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিমিয়নের এই উত্থান দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যেমন পরিবর্তন আনবে, তেমনই এর প্রভাব পড়তে পারে ইউক্রেন যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোতেও।
গত মে মাসের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে সিমিয়ন প্রায় ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, বুখারেস্টের মেয়র ও মধ্যপন্থী নেতা নিকোলাস ডান-এর থেকে এটি ছিল দ্বিগুণেরও বেশি।
তবে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি টেলিভিশন বিতর্কে ডানের ভালো পারফর্মেন্সের কারণে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। কারো কারো মতে, ডানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যা সিমিয়নের জন্য উদ্বেগের কারণ।
সিমিয়নের রাজনৈতিক আদর্শ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজেকে ‘সোvereigntist’ হিসেবে পরিচয় দেন, যা ব্রাসেলসের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) নির্দেশনার বিরোধিতা করে।
তাঁর এই মনোভাব হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবানের মতো নেতাদের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিমিয়নের জয় হলে ইউক্রেনকে সহায়তা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ইইউর সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাতিল হওয়া আগের নির্বাচনটি নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ঘটনার কারণে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুসারীদেরও সমর্থন রয়েছে সিমিয়নের প্রতি।
সিমিয়নের নির্বাচনী প্রচারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দেশের বাইরে থাকা রোমানীয়দের সমর্থন আদায় করা। তিনি অস্ট্রিয়া, ইতালি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে সফর করেছেন এবং প্রবাসী ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রবাসী রোমানীয়দের প্রায় ৬০ শতাংশ প্রথম রাউন্ডে সিমিয়নকে ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, নিকোলাস ডানের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও কার্যকর সরকার গঠনের অঙ্গীকার রয়েছে। তিনি শহরগুলোতে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছেন এবং অনেকেই তাকে পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও এই নির্বাচনের ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিমিয়নের জয় হলে দেশটির আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা যেতে পারে।
ইতোমধ্যেই, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটির মুদ্রা লিউর (Leu) দরপতন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কর্নেলিউ বিজোলা বলেন, “বুখারেস্টে এমন একটা ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে, যা নিকোলাই চাউসেস্কুর (রোমানিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক) পতনের পর আর দেখা যায়নি।
সিমিয়নের সম্ভাব্য বিজয় নিয়ে বিনিয়োগকারীরাও উদ্বিগ্ন।
নির্বাচনে হেরে গেলে সিমিয়ন সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আমরা ভূমিধস বিজয়ী হচ্ছি।
আমাদের থামাতে পারে এমন একটি বিষয় হলো ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রোমানিয়ার এই নির্বাচন দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে। একদিকে যেমন রয়েছে পশ্চিমানুসারে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার, তেমনি অন্য দিকে কট্টর ডানপন্থী আদর্শের উত্থান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন