রোমানিয়ার বুকে উদ্বোধন হলো বিশ্বের বৃহত্তম অর্থোডক্স খ্রিস্টান ক্যাথেড্রাল, যা জনসাধারণের মাঝে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি, রাজধানী বুখারেস্টে ১৫ বছর ধরে নির্মাণকাজ চলার পর, এই বিশাল গির্জার অভ্যন্তরে ধর্মীয় চিত্রকর্মের উৎসর্গীকৃত হওয়ার মাধ্যমে এর দ্বার উন্মোচন করা হয়।
এই খবর দিয়েছে সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস।
এই ‘পিপলস স্যালভেশন ক্যাথেড্রাল’, যা ‘ন্যাশনাল ক্যাথেড্রাল’ নামেও পরিচিত, এক বিশাল স্থাপনা। এর সর্বোচ্চ বিন্দুটি ১২৫ মিটারের বেশি উঁচু এবং ভেতরে একসঙ্গে ৫,০০০ উপাসকের স্থান সংকুলান সম্ভব।
অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাধিক্যপূর্ণ দেশটিতে এই ক্যাথেড্রালটি নির্মিত হয়েছে। ভেতরে সজ্জিত ফ্রেস্কো এবং মোজাইকগুলোতে সাধু ও দেবদূতদের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
প্রায় ১৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশটিতে, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে একটি জাতীয় ক্যাথেড্রাল নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। তবে দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং কয়েক দশকের কমিউনিস্ট শাসনের কারণে এর বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়, কারণ কমিউনিস্ট সরকার ধর্মকে দমন করতে চেয়েছিল।
রোমানিয়ান অর্থোডক্স চার্চ এই ক্যাথেড্রালকে “জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক” হিসেবে অভিহিত করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে রোমানিয়া অন্যতম ধর্মভীরু দেশ, যেখানে প্রায় ৮৫% মানুষ নিজেদের ধার্মিক হিসেবে পরিচয় দেয়। কমিউনিস্ট নেতা নিকোলাই চসেস্কুর তৈরি করা ‘প্যালেস অফ দ্য পিপল’-এর পেছনে, ২০১৮ সালে ক্যাথেড্রালের বেদী উৎসর্গীকরণের মাধ্যমে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
এই পর্যন্ত এটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩,১৫০ কোটি টাকা), যার অধিকাংশ এসেছে সরকারি তহবিল থেকে। এখনো কিছু কাজ সম্পন্ন হওয়ার বাকি রয়েছে।
রবিবার অনুষ্ঠিত হওয়া বিশেষ প্রার্থনাসভায় দেশটির রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ক্যাথেড্রালের বাইরের বিশাল পর্দায় বহু ভক্তকে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে দেখা গেছে।
ক্যাথেড্রালের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, মোজাইক ও চিত্রকর্মগুলি ১৭,৮০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই চিত্রকর্মগুলোর শিল্পী ড্যানিয়েল কোড্রেস্কু, যিনি সাত বছর ধরে এই কাজে যুক্ত ছিলেন, জানান, মধ্যযুগীয় রোমানীয় চিত্রকর্ম এবং বাইজেন্টাইন বিশ্বের শিল্পকলা থেকে তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
এই বিশাল প্রকল্পের ব্যয়ের কারণে রোমানিয়ার অনেকের মনে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, জনসাধারণের অর্থে নির্মিত এই বিশাল গির্জার বদলে, অর্থ স্কুল বা হাসপাতালের মতো জনকল্যাণমূলক খাতে ব্যয় করা যেত।
বুখারেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্লদিউ তুফিস এই প্রকল্পকে “জনগণের অর্থের অপচয়” বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি মনে করেন, এটি কিছু রোমানীয়র জন্য “জাতীয় গর্ব ও পরিচয়” বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
অন্যদিকে, র্যারেস ঘিওর্ঘিস, যিনি গির্জার সমর্থক, মনে করেন স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে এই অর্থ ব্যয় করা উচিত ছিল, যা সুশাসনের জন্য জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস