বদলে যাওয়া পৃথিবীর ভ্রমণ প্রবণতায় এখন নতুন গন্তব্যের সন্ধান বাড়ছে, যেখানে একই সাথে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে, আবার পকেটের ওপরও তেমন চাপ পড়বে না।
সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার চিরপরিচিত সৌন্দর্যের বাইরে, ইউরোপের অন্য এক মনোমুগ্ধকর স্থান হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণের ঠিকানা— রোমানিয়ার ট্রান্সিলভেনিয়ান আল্পস।
পর্যটকদের জন্য আল্পস পর্বতমালার আকর্ষণ বরাবরই আকাশচুম্বী। তবে, একই মানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক নিদর্শনের স্বাদ যদি তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়, তবে কেমন হয়?
ট্রান্সিলভেনিয়ার আল্পস সেই সুযোগটিই নিয়ে এসেছে। এখানকার পাহাড়গুলো যেন প্রকৃতির এক নীরব সাক্ষী, যেখানে এখনও মানুষের আনাগোনা অপেক্ষাকৃত কম।
ফলে, প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে আসার এক অসাধারণ সুযোগ রয়েছে এখানে।
এই অঞ্চলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এখানকার বন্যপ্রাণী।
বাদামী ভাল্লুক, নেকড়ে এবং ইউরেশীয় বাইসন সহ বিভিন্ন ধরণের প্রাণীর আবাসস্থল হলো এই অঞ্চল। এছাড়াও, এখানে আছে লাল হরিণ, লিঙ্কস এবং আরও অনেক দুর্লভ বন্য প্রাণী।
এখানকার সবুজ বনভূমি আর ফুলের বাগানগুলো যেন এক একটি জীবন্ত ক্যানভাস।
ট্রান্সিলভেনিয়ার আল্পসে ভ্রমণ করার সেরা উপায় হলো ‘ভিয়া ট্রান্সিলভ্যানিকা’ নামের প্রায় ৮৭০ মাইল দীর্ঘ একটি হাইকিং ট্রেইল ধরে হাঁটা।
এই পথ ধরে আপনি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য অনুভব করতে পারবেন।
পথে ১৪টি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানও পরিদর্শন করা সম্ভব।
এখানকার ঐতিহাসিক শহর সিঘিসোয়ারার মতো স্থানগুলোতে গেলে স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়।
আল্পসের তুলনায় এখানকার খরচও বেশ কম।
শীতকালে, পিয়াত্রা ক্রাইউই জাতীয় উদ্যানটি একটি আকর্ষণীয় স্কিইং গন্তব্য হতে পারে।
সুইজারল্যান্ডের জুরমাট-এর মতো জনপ্রিয় স্কি রিসোর্টে যেখানে দৈনিক প্রায় ১০২ সুইস ফ্রাঙ্ক খরচ হয়, সেখানে পিয়ানা ব্রাভ-এর মত স্থানে মাত্র ৪৬ রোমানিয়ান লেউ (প্রায় ১,০০০ টাকার কাছাকাছি) খরচ করে একই আনন্দ উপভোগ করা যেতে পারে।
ঐতিহাসিক দিক থেকেও ট্রান্সিলভেনিয়া কম আকর্ষণীয় নয়।
এখানকার স্থাপত্যশৈলী, সংস্কৃতি এবং খাদ্যাভ্যাসে বিভিন্ন সময়ের মানুষের ছোঁয়া লেগে আছে।
ট্রান্সফাগারাসান হাইওয়ে ধরে ৮,০০০ ফুট উচ্চতায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও অসাধারণ।
এখানকার পুরনো শহরগুলো, যেমন—সিবিয়ু এবং ব্রাসভ-এ গেলে মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের সাক্ষী থাকা যায়।
সিবিয়ু শহরে পুরনো শহরের পাথুরে গলিগুলো, যা বার্নের স্থাপত্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।
ব্রাসভে অবস্থিত ব্ল্যাক চার্চ-এর মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলোও পর্যটকদের মন জয় করে।
এখানে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিকল্প রয়েছে।
আপনি চাইলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ‘ম্যাটকা’-র মতো হোটেলে থাকতে পারেন, যেখানে বন ও পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ আছে।
আবার, ‘ভ্যালিয়া ভার্দে রিসোর্ট’-এর মতো ছোট, আরামদায়ক স্থানেও থাকতে পারেন।
খাবারের ক্ষেত্রেও ট্রান্সিলভেনিয়া তার নিজস্বতা বজায় রেখেছে।
সুইস পনিরের বদলে এখানে ‘ব্রানজা দে বার্ডুফ’-এর মতো স্থানীয় পনিরের স্বাদ নিতে পারেন।
সুইসদের ‘রস্টি’র পরিবর্তে এখানে ‘মামালিগা’ নামের একটি খাবার বেশ জনপ্রিয়।
এছাড়াও, এখানকার মধুও খুব বিখ্যাত।
সবুজ পাহাড়, স্বচ্ছ বাতাস আর ঐতিহাসিক নিদর্শনের এক অপূর্ব মিশ্রণ হলো এই ট্রান্সিলভেনিয়ান আল্পস।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন এবং একই সঙ্গে নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
আপনার পরবর্তী ভ্রমণের জন্য ট্রান্সিলভেনিয়ান আল্পস-কে বিবেচনা করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক