রোমের বিড়াল: এক ঐতিহাসিক শহরের নীরব সাক্ষী।
প্রাচীন স্থাপত্য আর আধুনিক জীবনের কোলাহলে ভরা ইতালি। এই শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস আর সংস্কৃতির নানা নিদর্শন। পর্যটকদের আনাগোনা এখানে লেগেই থাকে, সবাই যেন ছুটে আসে প্রাচীন নিদর্শনের সাক্ষী হতে, উপভোগ করতে ইতালীয় পিৎজা আর রঙিনgelato-র স্বাদ।
কিন্তু এই জনকোলাহলের মাঝেও নীরবে বসবাস করে কয়েক হাজার বিড়াল, যাদের জীবনযাত্রা অনেকের কাছেই অজানা।
প্রাচীন রোমে, বিড়ালদের দেবী ডায়ানার সঙ্গে সম্মানিত করা হতো। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে রোমান আইনে তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল।
বর্তমানে, এই শহরে প্রায় ৪,০০০ নিবন্ধিত বিড়াল কলোনি রয়েছে। প্রতিটি কলোনিতে ৫ থেকে ৪০টি পর্যন্ত বিড়াল দেখা যায়।
এদের দেখাশোনা করেন ‘গাত্তারা’ নামক কিছু স্বেচ্ছাসেবী নারী, যারা নিয়মিতভাবে তাদের খাবার ও প্রয়োজনীয় যত্ন নেন।
এই বিড়ালদের জীবনযাত্রা ক্যামেরাবন্দী করেছেন ট্রায়ার স্কট নামের একজন আলোকচিত্রী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পশুদের ছবি তোলেন এবং তাদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা রয়েছে।
তার চোখে, বিড়ালগুলো যেন এক একটি জীবন্ত ইতিহাস।
কলোসিয়ামের (Colosseum) আশেপাশে একসময় অনেক বিড়াল ছিল, কিন্তু এখন তাদের মধ্যে শুধুমাত্র অগাস্টো নামের একটি বিড়াল টিকে আছে। পর্যটকদের কাছে অগাস্টো একজন সেলিব্রিটির মতোই, আর সবাই তাকে ক্যামেরাবন্দী করতে উৎসুক থাকে।
এই শহরের নীরব সৌন্দর্যের আরেকটা উদাহরণ হলো ‘নন-ক্যাথলিক গোরস্থান’। এখানে শেক্সপিয়ার ও কীটসের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের সমাধির পাশে বিড়ালগুলো অবাধে ঘুরে বেড়ায়।
ট্রায়ার স্কট তার বই ‘ক্যাটস অফ রোম’-এ এই বিড়ালদের জীবনকথা তুলে ধরেছেন। বইটিতে তিনি তাদের ছবি এবং কলোনিগুলোর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
শহরের কোলাহল থেকে দূরে, এই বিড়ালগুলো যেন এক শান্ত, স্নিগ্ধ জীবনের প্রতীক।
বিড়ালগুলো হয়তো জন্ম থেকেই বন্য, অথবা পরিত্যক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জীবন কঠিন, কারণ আধুনিক শহরের নানা ঝুঁকি তাদের চারপাশে বিদ্যমান।
কিন্তু তাদের প্রতি গাত্তারার যত্ন এবং ভালোবাসাই তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তারা যেন এই শহরের নীরব প্রহরী, যারা যুগের পর যুগ ধরে এখানকার ইতিহাসকে ধারণ করে চলেছে।
তথ্য সূত্র: People