ব্রিটিশ কলম্বিয়ার পুরনো প্রাসাদে ফিরছে পুরোনো দিনের আমেজ! আপনার পছন্দের টিভি শো-এর স্মৃতি!

কানাডার ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপে এক অত্যাশ্চর্য অভিজ্ঞতা: পুরনো এক ম্যানর হাউসে নতুন রূপে ফিরল বিলাসবহুল হোটেল।

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপে অবস্থিত ঐতিহাসিক রোজমিড হাউস হোটেলটি নতুন করে সেজে উঠেছে। ১১৮ বছর বয়সী এই ম্যানর হাউসটি এখন তার পুরনো রূপ পাল্টে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেজে উঠেছে, যা ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ আকর্ষণ হতে চলেছে।

এই হোটেলে রয়েছে পুরনো দিনের আসবাবপত্র এবং জনপ্রিয় টিভি শো ও সিনেমার সেট থেকে আনা বিভিন্ন জিনিসপত্রের এক বিশাল সংগ্রহ।

রোজমিড হাউসের আকর্ষণ শুরু হয় একেবারে প্রবেশদ্বার থেকে। এখানে দর্শকদের স্বাগত জানাতে রয়েছে নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘দ্য ক্রাউন’-এর শুটিংয়ে ব্যবহৃত বাকিংহাম প্যালেসের আসল গেট।

গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে বিশাল এক ম্যানর হাউস, যা ১৯০৬ সালে স্থপতি স্যামুয়েল ম্যাকলুর ডিজাইন করেছিলেন। এই প্রাসাদটি একসময় ব্যক্তিগত বাসভবন ছিল।

হোটেলটি সংস্কারের পেছনে ছিলেন রিয়েল এস্টেট ডেভলপমেন্ট কোম্পানি আরাগন প্রপার্টিজের প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা লেনি ময়। তিনি জানান, তাঁর এক মেয়ের ফ্যাশন স্কুলে পড়াশোনার সুবাদে লন্ডনে যাওয়ার সুযোগ হয়।

সেখান থেকেই তিনি নিলামে পুরনো দিনের আসবাবপত্র কেনা শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি বিভিন্ন ম্যানর এস্টেট, সিনেমার সেট এবং লন্ডনের বিখ্যাত হোটেল থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে থাকেন।

এই সংগ্রহের মধ্যে ছিল ১৮ ও ১৯ শতকের নানা দুষ্প্রাপ্য জিনিস। রোজমিড হাউসে বর্তমানে প্রায় ১,৫০০-এর বেশি প্রাচীন জিনিসপত্র রয়েছে, যা হোটেলটিকে এক ভিন্ন রূপ দিয়েছে।

“ঐতিহ্য আর আবিষ্কার”-এই ধারণা নিয়ে কাজ করেছেন লেনি ময় এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কারেন উইচার্ট।

হোটেলের কক্ষগুলোও বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষে পুরনো দিনের নকশা এবং আধুনিকতার এক চমৎকার মিশ্রণ রয়েছে।

এখানকার ১৪টি কক্ষে ঐতিহ্যপূর্ণ আবহ বজায় রাখা হয়েছে, আবার নতুন ভবনে তৈরি ১৪টি কক্ষে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় কক্ষটি হলো ‘ডাইনেস্টি স্যুট’, যেখানে রয়েছে চীনা সংস্কৃতির ছোঁয়া।

প্রতিটি কক্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।

খাবার-দাবারের জন্য এখানে রয়েছে ‘জানেভকা কিচেন অ্যান্ড লাউঞ্জ’। রেস্তোরাঁটি ২০১৯ সাল থেকে চালু হয়েছে।

এখানে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার পাওয়া যায়। রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ আন্দ্রে আলরিজ, যিনি এর আগে ভ্যাঙ্কুভারের ‘সাভিও ভলপে’-তে কাজ করেছেন।

তিনি ফিলিপিনো ও জ্যামাইকান রান্নার মিশ্রণে বিভিন্ন পদ তৈরি করেন। মেন্যুতে রয়েছে বিশেষ ধরনের সি-ফুড এবং মাংসের বিভিন্ন পদ।

ডেজার্টের জন্য রয়েছে পীচ মেলবা, যা পরিবেশন করা হয় পুরনো দিনের ডিনারওয়্যারে।

রোজমিড হাউসে একটি অত্যাধুনিক স্পা সেন্টারও রয়েছে, যেখানে হিমালয়ান সল্ট ওয়াল এবং প্রাচীন আয়না দিয়ে সাজানো হয়েছে। এখানে রয়েছে ‘সল্ট অ্যান্ড আইভি স্পা’, যেখানে স্থানীয় ‘সিফ্লোরা’ (Seaflora) পণ্য ব্যবহার করে ত্বকের পরিচর্যা করা হয়।

হোটেলের আশেপাশেও ঘোরার মতো অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে। কাছেই রয়েছে ম্যাকলে ক্লিফ পার্ক, যেখানে প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

বর্তমানে, রোজমিড হাউসের ম্যানর কালেকশনের কক্ষগুলোর ভাড়া শুরু হচ্ছে প্রায় ৫১৫ মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ৫৬,০০০ টাকার বেশি) থেকে এবং গ্রোভ কালেকশনের কক্ষগুলোর ভাড়া শুরু হচ্ছে ৪৪০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৪৮,০০০ টাকার বেশি) থেকে।

ঐতিহাসিক এই ম্যানর হাউসটি বর্তমানে ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বিলাসবহুল জীবন কাটানোর সুযোগ রয়েছে, যা একইসঙ্গে ইতিহাস ও আধুনিকতার এক দারুণ মেলবন্ধন।

তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল + লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *