শিরোনাম: “ফেনিক্স রটারডাম”: অভিবাসন বিষয়ক এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন
নেদারল্যান্ডসের রটারডামে সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে ‘ফেনিক্স রটারডাম’ নামের এক ব্যতিক্রমী জাদুঘর, যা অভিবাসনের নানা দিক নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করবে। এই জাদুঘরটি শুধু একটি সংগ্রহশালা নয়, বরং এটি মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে তুলে ধরার এক অনন্য প্রয়াস।
এখানে অভিবাসন, শরণার্থী, এবং বিভিন্ন কারণে স্থান পরিবর্তন করা মানুষের জীবনযাত্রা, আশা, এবং সংগ্রামের গল্পগুলো শিল্পকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীকী উপস্থাপন। এখানকার প্রদর্শনীগুলোতে শরণার্থীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে শুরু করে, খ্যাতিমান শিল্পীদের তৈরি করা অভিবাসন বিষয়ক শিল্পকর্মও স্থান পেয়েছে।
এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, শিল্পী ইয়াঙ্কা শোনিবের তৈরি “Refugee Astronaut IX” নামের একটি শিল্পকর্ম, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মহাকাশে পাড়ি দেওয়া একজন নভোচারীর ধারণা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এছাড়া, শিল্পী রেড গ্রুমসের তৈরি করা একটি বিশাল আকারের নিউ ইয়র্ক সিটির বাসের মডেলও দর্শকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে, যেখানে অভিবাসীদের নতুন শহরে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
ফেনিক্স রটারডামের পরিচালক অ্যানা ক্রেমার্স-এর মতে, “অভিবাসন একটি চিরন্তন এবং সার্বজনীন বিষয়। মানুষ হিসেবে আমরা সবসময়ই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়েছি।
ভালোবাসা, কাজ অথবা নতুন কিছু খুঁজে বের করার আকাঙ্ক্ষা থেকেই মানুষ ঘর ছাড়ে।” জাদুঘরের প্রদর্শনীগুলো সেই বহু-আলোচিত এবং বিতর্কিত বিষয়টিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছে।
জাদুঘরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে “স্যুটকেস ল্যাবিরিন্থ”।
এখানে প্রায় দুই হাজার স্যুটকেস রাখা হয়েছে, যেগুলোতে বিভিন্ন মানুষের অভিবাসন বিষয়ক ব্যক্তিগত গল্প সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি স্যুটকেসের সঙ্গে একটি করে কিউআর কোড দেওয়া আছে, যা স্ক্যান করে দর্শকরা তাদের মাইগ্রেশন বিষয়ক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারেন।
এই জাদুঘরটি নেদারল্যান্ডসের ডাচ সমাজে অভিবাসন বিষয়ক ধারণা পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এখানে শুধু কষ্টের কাহিনী নয়, বরং অভিবাসনের ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরা হয়েছে।
এটি দর্শকদের মধ্যে সহানুভূতির জন্ম দেবে এবং অভিবাসন সম্পর্কে একটি বৃহত্তর ধারণা তৈরি করতে সহায়তা করবে।
ফেনিক্স রটারডামের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা বিশ্বজুড়ে অভিবাসন নিয়ে মানুষের মনে নতুন ভাবনা ও আলোচনার জন্ম দেবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান