রাগবি: বিভক্ত বিশ্বে খেলাতেও কি বিভেদ? ভক্তদের মধ্যে উদ্বেগে খেলাপ্রেমীরা!

ইংলিশ রাগবিতে ‘অ্যাওয়ে এন্ডস’ – বিতর্ক এবং ভবিষ্যৎ। রাগবি খেলার মাঠগুলোতে সাধারণত হোম এবং অ্যাওয়ে দলের সমর্থকদের মধ্যে মিশে খেলা উপভোগ করার একটা সংস্কৃতি দেখা যায়।

খেলার উত্তেজনায় মাঠের পরিবেশ সবসময়ই থাকে সরগরম। তবে সম্প্রতি, ইংলিশ প্রিমিয়ারশিপ রাগবি কর্তৃপক্ষ খেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে একটি নতুন পরীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছে – ‘অ্যাওয়ে এন্ডস’ বা আলাদা গ্যালারি তৈরি করা, যেখানে শুধুমাত্র সফরকারী দলের সমর্থকেরা বসতে পারবেন।

এই পদক্ষেপটি নিয়ে এখন চলছে জোর আলোচনা। রাগবি মাঠের চিরাচরিত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের বিপরীতে, কিছু মানুষের মতে, এই ‘অ্যাওয়ে এন্ডস’ খেলাটির উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।

তাদের যুক্তি, এই ধরনের ব্যবস্থা ফুটবল খেলার মতো দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি করবে, যা খেলাটিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে। হারলেকুইনস দলের খেলোয়াড় উইল ইভান্স মনে করেন, অ্যাওয়ে সেকশন তৈরি করা হলে খেলা আরও উন্নত হবে।

কারণ এর ফলে মাঠের শব্দ আরও বাড়বে এবং খেলোয়াড়রা একটি “কোলড্রন”-এর মতো পরিবেশে খেলার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ রাগবি খেলার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির পরিপন্থী।

তাদের আশঙ্কা, এর ফলে মাঠের পরিবেশ আরও বেশি বিভক্ত হয়ে যেতে পারে এবং সমর্থকদের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, রাগবি খেলার মূল আকর্ষণ হলো এর অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ, যেখানে সব দলের সমর্থকেরা মিলেমিশে খেলা উপভোগ করেন।

সাবেক রাগবি খেলোয়াড় ব্রায়ান মুর-এর মতে, খেলাটিকে এভাবে বিভক্ত করার ফলে রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে দর্শকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আরও বাড়তে পারে। রাগবিতে রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক বেশি বিতর্ক হয়, যা এই ধরনের বিভাজনের ফলে আরও বাড়তে পারে।

এই বিতর্কের একটি বড় কারণ হলো খেলাটির বাণিজ্যিকীকরণ। প্রিমিয়ারশিপ রাগবি কর্তৃপক্ষ মনে করে, খেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে টেলিভিশন স্বত্ব থেকে বেশি অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হবে।

ফুটবল খেলার উদাহরণ টেনে তারা বলছেন, ক্লাবগুলো টিভি স্বত্বের জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ পায়, কারণ খেলার মাঠের পরিবেশ থাকে উত্তেজনাপূর্ণ। তাই, রাগবিতেও একই ধরনের পরিবেশ তৈরি করতে পারলে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আরও বাড়বে।

তবে, কুইন্স সমর্থক সংস্থার প্রধান ফিল গিবসন মনে করেন, ‘অ্যাওয়ে এন্ডস’ ধারণাটি খুব বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো নয়। তার মতে, দর্শকদের মধ্যে বিভাজন তৈরির কোনো সম্ভাবনা নেই।

কারণ, গ্যালারিতে আলাদা বসার ব্যবস্থা থাকলেও, সমর্থকেরা তাদের পছন্দমতো যেকোনো স্থানে বসতে পারেন। বর্তমানে, অনেক ক্লাব দল এরই মধ্যে তাদের সমর্থকদের জন্য টিকিট ব্লক করে থাকে।

গিবসন উল্লেখ করেন, “আমরা ১৫ বছর ধরে এটা করছি, তাই এটি নতুন কিছু নয়।” গ্লস্টার রাগবি দলের সমর্থক বব রামবল মনে করেন, রাগবি খেলার এই “অ্যাওয়ে এন্ডস” ব্যবস্থা হয়তো সমস্যার সমাধান নয়।

তবে তিনি এই পরীক্ষার ভালো ফল কামনা করেন। আসলে, খেলাধুলার জগতে দর্শক-আকর্ষণ এবং বাণিজ্যিক সাফল্যের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম সম্পর্ক রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ চাইছে খেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে আরও বেশি দর্শক তৈরি করতে, যা তাদের ব্যবসার উন্নতি ঘটাবে। তবে, খেলার ঐতিহ্য এবং সমর্থকদের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রাখাটাও জরুরি। এখন দেখার বিষয়, ‘অ্যাওয়ে এন্ডস’ এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারে কিনা।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *