আতঙ্কের মধ্যেও অবিচল: রূপান্তরকামী প্রবীণদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প!

শিরোনাম: অধিকার হারানোর আশঙ্কায়ও হার না মানা: প্রবীণ রূপান্তরকামীদের লড়াই

সমকামীদের অধিকার নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রবীণ রূপান্তরকামী (Transgender) ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন (CNN)। তাদের জীবনসংগ্রাম, অধিকার আদায়ের পথে বাধা এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছেন কয়েকজন প্রবীণ রূপান্তরকামী। তাদের কথায় উঠে এসেছে, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কিভাবে তারা নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন।

ষাটের কোঠায় পা রাখা রেনাটা রামোস জানিয়েছেন, ছোটবেলায় তিনি যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করতেন, তিনি যেন একজন মেয়ে হয়ে জন্ম নিতে পারেন। অবশেষে ৫০ বছর বয়সে তিনি প্রকাশ্যে নারী হিসেবে জীবন শুরু করেন। তিনি বলেন, “তখন আমার মনে হয়েছিল, যেন মেঘের উপর হেঁটে বেড়াচ্ছি।”

সিএনএন-এর সঙ্গে আলাপকালে রামোস জানিয়েছেন, রূপান্তরকামীদের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের সাক্ষী তিনি। একবিংশ শতাব্দীতে এসে লিঙ্গ-সংবেদনশীল স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হয়েছে এবং অনেক রাজ্যে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের সুরক্ষা দিতে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা তাদের জন্য ইতিবাচক দিক। তবে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু সিদ্ধান্ত তাদের হতাশ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন রূপান্তরকামীদের অধিকার খর্ব করতে বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, কেবল দুটি লিঙ্গের (gender) ধারণার স্বীকৃতি, এবং মেয়েদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা।

রূপান্তরকামীদের অধিকার রক্ষায় দশকের পর দশক ধরে চলা বিভিন্ন আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে রামোস বলেন, “আমাদের পরিচয় কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তারা হয়তো আমাদের অধিকার কেড়ে নিতে পারে, প্রকাশ্যে এবং স্বাধীনভাবে বাঁচার পথে বাধা দিতে পারে, কিন্তু আমাদের সত্তাকে তারা মুছে ফেলতে পারবে না।”

আরেকজন রূপান্তরকামী ক্রিস স্মিথ-এর কথায় উঠে আসে নিজের ভেতরের আসল মানুষটিকে খুঁজে পাওয়ার গল্প। নিজের রূপান্তরকামিতার কথা পরিবারের কাছে বলতে গিয়ে একসময় মা’কে হারিয়েছিলেন তিনি। এরপর বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় এবং সম্পর্কের মাধ্যমে তিনি নতুন করে বাঁচতে শিখেছেন। তিনি বলেন, “রূপান্তরকামীরা সমাজকে শেখায়, স্বাধীনতা আসলে কী। আমরা প্রতিদিন আমাদের স্বাধীনতা উপভোগ করি। আমরা নিজেদের ভালোবাসি, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”

পঁয়ষট্টি বছর বয়সী পলিন পার্ক-এর মতে, রূপান্তরকামী এবং কুইয়ার (Queer) পরিচয়কে অস্বীকার করাটা নিপীড়নের শামিল। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় হিজড়া সম্প্রদায় এবং থাইল্যান্ডের কাথেয়-দের উদাহরণ টেনে বলেন, ইতিহাসে সবসময়ই রূপান্তরকামীদের অস্তিত্ব ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।

আরেকজন শিল্পী জাস্টিন বিভিয়ান বন্ড-এর মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ধরনের সিদ্ধান্ত আসলে অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। তাদের মতে, সমাজে পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাদের কথায়, “এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, আমরা সবসময়ই আমাদের মতো করে বাঁচতে শিখেছি, আনন্দ করতে শিখেছি।”

ডন মেলোডি নামের আরেকজন নারী জানান, তার ছেলের মাধ্যমে তিনি প্রথম জানতে পারেন রূপান্তরকামিতার বিষয়ে। তিনি বলেন, “আমি আমার সন্তানের কাছ থেকে শিখেছি, যদি তুমি সাহসী হও, তাহলে তুমিও পারবে।” ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর তিনি হতাশ হলেও মনে করেন, “অগ্রগতি কেউ আটকাতে পারবে না।”

এই প্রবীণ রূপান্তরকামীরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *