টিকটকে বিতর্ক: ছাত্রীনিবাসে কেন নিষিদ্ধ হচ্ছে পোস্ট?

যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামাতে মেয়েদের সামাজিক সংগঠন ‘সোরোরিটি’তে (Sorority) ভর্তি হওয়ার এক বিশেষ প্রক্রিয়া ‘রাশ উইক’ (Rush Week)। এই সময়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা তাদের সোরোরিটিতে যুক্ত হওয়ার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যায়।

সম্প্রতি, এই ‘রাশ উইক’ নিয়ে ‘রাশটক’ (RushTok) নামে একটি নতুন প্রবণতা তৈরি হয়েছে, যেখানে ছাত্রীরা তাদের অভিজ্ঞতাগুলো টিকটকে (TikTok) প্রকাশ করে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় অনেক সোরোরিটি কর্তৃপক্ষ এখন তাদের সদস্যদের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতে নিষেধ করছে।

আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৩,০০০ শিক্ষার্থী গ্রিক লাইফে (Greek Life) অংশ নেয়। ‘রাশ উইক’-এর সময় ছাত্রীদের পোশাক, মেকআপ এবং জীবনযাত্রার একটি ঝলক দেখা যায়, যা টিকটকে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

কাইরান ডার্নেল নামের একজন ছাত্রী, যিনি আগে ‘রাশটক’-এর মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেছিলেন, জানিয়েছেন যে এই ধরনের কনটেন্টের কারণে তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব অনুভব করেছেন। তার মতে, এবার এটি ঘৃণার ভিন্ন রূপ নিয়েছে।

‘রাশ উইক’ মূলত ১০ দিনের একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ছাত্রীরা বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সোরোরিটিতে তাদের স্থান করে নেওয়ার চেষ্টা করে। এর জন্য তাদের ‘সোশ্যাল রিজুমে’ জমা দিতে হয় এবং সিনিয়র সদস্যদের কাছ থেকে সুপারিশ নিতে হয়।

এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য বেশ ভালো খরচ হয়। শুধু অংশগ্রহণের ফি বাবদই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দিতে হয় ৫৫০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৬০,০০০ বাংলাদেশী টাকা)। নির্বাচিত না হলেও এই টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। আর যদি কেউ নির্বাচিত হয়, তাহলে তাকে প্রতি সেমিস্টারে প্রায় ৮,৪০০ মার্কিন ডলার (৯,১৪,৪০০ বাংলাদেশী টাকা) খরচ করতে হয়, যা হোস্টেলে থাকার খরচ বাদে।

এই প্রতিযোগিতার চাপ এতটাই বেশি থাকে যে, অনেক সময় ছাত্রীদের পছন্দের সোরোরিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য পরামর্শকদের সাহায্য নিতে হয়। এই পরামর্শকদের ফি-ও বেশ কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

টিকটকে ‘রাশটক’-এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায়, অনেক শিক্ষার্থী এখন সামাজিক মাধ্যমে প্রভাবশালী হওয়ার দিকে ঝুঁকছে। কাইরান ডার্নেলের মতে, এখন অনেক মেয়ে শুধু প্রভাবশালী হওয়ার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে, যা তাদের মধ্যেকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তবে, কাইরানের ছোট বোন ইজি ডার্নেল, যিনি নিজেও একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত মুখ, তার দিদির অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছেন কীভাবে সমালোচনার মোকাবেলা করতে হয়।

এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তরুণ প্রজন্মের জীবনে প্রভাব ফেলছে। অনলাইনে জনপ্রিয়তা পাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষা অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি একটি উদ্বেগের বিষয়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *