যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও ইউক্রেনে হামলা, নিহত ১।
রাশিয়া কর্তৃক ঘোষিত ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ঠা মে) ভোরে এই হামলায় একজন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন বলে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধবিরতির সময়টি নির্ধারণ করা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয় উদযাপনের দিন, যা রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আগামী ৯ই মে এই বিজয় দিবস পালন করার কথা রয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই যুদ্ধবিরতিকে ‘চক্রান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা যখন ভেস্তে গেছে, তখন এমন যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কোনো অর্থ নেই।
অন্যদিকে, মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শুক্রবারের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে শি জিনপিংকে ‘প্রধান অতিথি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পুতিন। বুধবার (৩রা মে) থেকে তিনি চার দিনের সফরে রাশিয়াতে অবস্থান করছেন।
ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলের সীমান্তবর্তী আবাসিক এলাকায় রাশিয়ান বাহিনী বিমান হামলা চালায়। এতে একজন নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সুমি অঞ্চলে অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
এদিকে, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘কেন যেন সবাই ৮ই মে পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, যেন পুতিন তার কুচকাওয়াজের জন্য নীরবতা পান।’
গত মার্চ মাসে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বন্ধের জন্য ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, যা ইউক্রেন গ্রহণ করে। তবে ক্রেমলিন তাদের শর্তে যুদ্ধবিরতি চাইছে।
রাশিয়ার অভ্যন্তরেও বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রোন হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশটির বেলгород, লিপেটস্ক, ওরেইনবার্গ, রিজান এবং টাম্বোভ অঞ্চলে ড্রোন হামলার আশঙ্কা ছিল। তবে কোনো ড্রোন ভূপাতিত বা প্রতিহত করার খবর পাওয়া যায়নি। রুশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (রসাভিয়াৎসিয়া) নিজনি নভগোরোদ বিমানবন্দরের বিমান চলাচলও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণ করে।
চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতকালে পুতিন বলেন, ‘কঠিন যুদ্ধ বছরগুলোতে আমাদের জনগণের মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বের বন্ধন আধুনিক রুশ-চীনা সম্পর্কের ভিত্তি।’ তিনি আরও যোগ করেন, মস্কো এবং বেইজিং উভয় দেশের মানুষের সুবিধার জন্য সম্পর্ক তৈরি করছে, যা কারও বিরুদ্ধে নয়।
জবাবে শি জিনপিং বলেন, ‘ইতিহাস এবং বাস্তবতা প্রমাণ করেছে, চীন-রাশিয়া সম্পর্ক প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বন্ধুত্বের জন্য অপরিহার্য।’ তিনি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের প্রতি সমর্থন জানান।
পুতিন এবং শি জিনপিংয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪০ বারের বেশি বৈঠক হয়েছে। তাদের মধ্যে গভীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তাদের ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বকে’ আরও শক্তিশালী করেছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আক্রমণের পর চীন মস্কোর প্রতি কূটনৈতিক সমর্থন জুগিয়েছে এবং রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের প্রধান বাজারে পরিণত হয়েছে, যা ক্রেমলিনের যুদ্ধ তহবিলে সহায়ক হচ্ছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে যখন সামরিক সরঞ্জামের সরবরাহ কমে যায়, তখন রাশিয়া তাদের সামরিক কার্যক্রম বজায় রাখতে চীনকে প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহার করছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস