রাশিয়ায় এলটন জনের এইডস ফাউন্ডেশন নিষিদ্ধ: স্তম্ভিত বিশ্ব!

রাশিয়া, এলটন জন এইডস ফাউন্ডেশনকে নিষিদ্ধ করেছে, কারণ তারা এলজিবিটিকিউ+ অধিকারের প্রতি সমর্থন জানায়। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ এইডস প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে কাজ করা এলটন জন এইডস ফাউন্ডেশনকে (EJAF) নিষিদ্ধ করে।

১৯৯২ সালে ব্রিটিশ গায়ক এবং গীতিকার এলটন জন এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থাটি রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে এইচআইভি চিকিৎসার জন্য অর্থ সরবরাহ করে।

এছাড়াও, এই সংস্থাটি এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকারের পক্ষে কাজ করে। রাশিয়ায় এই সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় EJAF-কে একটি “অবাঞ্ছিত সংস্থা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর ফলে এই সংস্থাটি এখন থেকে রাশিয়ায় কাজ করতে পারবে না এবং এর কর্মী ও অংশীদারদের ফৌজদারি বিচারের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসিকিউটরের কার্যালয় এই ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে “অ-ঐতিহ্যবাহী যৌন সম্পর্ক, পশ্চিমা পরিবার ব্যবস্থা এবং লিঙ্গ পরিবর্তন”-এর প্রচারের অভিযোগ এনেছে। একইসাথে, ফাউন্ডেশনটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

প্রসিকিউটর অফিসের মতে, EJAF এমন সব দেশের প্রতি “নেতিবাচক মনোভাব” পোষণ করে যারা “ঐতিহ্যবাহী আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক মূল্যবোধকে” সমর্থন করে। তারা আরও অভিযোগ করেছে যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ২০২২ সালের আক্রমণের পর থেকে ফাউন্ডেশনটি “রাশিয়ার সম্মানহানি” করার প্রচারণায় অংশ নিয়েছে।

রাশিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আরও বলেছে, “এই ব্রিটিশ ফাউন্ডেশন আমাদের দেশে এমন কিছু অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে, যাদের বিদেশি এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”

এইডস এবং এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জন্য এই সিদ্ধান্ত একটি বড় ধাক্কা। সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা Roszdravnadzor-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়ায় ১২ লক্ষেরও বেশি মানুষ এইচআইভি আক্রান্ত, যা ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এছাড়াও, ২০২৩ সাল থেকে দেশটিতে এইচআইভি চিকিৎসার ঔষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অনেক রোগী পরীক্ষা এবং জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (antiretroviral therapy) থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ায় এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের উপর দমননীতি বেড়েছে। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ একটি “আন্তর্জাতিক এলজিবিটি পাবলিক মুভমেন্ট”-কে চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

এর ফলস্বরূপ, ইতোমধ্যে দেশজুড়ে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অনেক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের কারাদণ্ড হয়েছে।

এলটন জনের রাশিয়ায় বিপুল সংখ্যক ভক্ত রয়েছে এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে সেখানে এলজিবিটিকিউ+ অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। ২০১৪ সালে, রাশিয়ায় কয়েকটি কনসার্টে অংশগ্রহণের পর তিনি দেশটির “গে-প্রোপাগান্ডা” আইনের নিন্দা করে একটি খোলা চিঠি লেখেন এবং ভ্লাদিমির পুতিনকে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

এর এক বছর পর, ক্রেমলিন ঘোষণা করে যে রুশ প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগতভাবে এলটন জনকে ফোন করেছিলেন এবং তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *