সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের বাজারে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে রাশিয়া ও বেলারুশের কাঠ। নিষেধাজ্ঞার কারণে এই কাঠ আমদানি নিষিদ্ধ হলেও, তা বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে এখনো বাজারে আসছে।
কাঠ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই কাজটি করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ‘ওয়ার্ল্ড ফরেস্ট আইডি’ নামের একটি সংস্থা। তারা কাঠের উৎস যাচাইয়ের জন্য বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য স্বীকৃত ‘FSC’ এবং ‘PEFC’ সনদ পাওয়া কাঠের প্রায় অর্ধেকই তাদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়। সহজ ভাষায় বললে, কাঠগুলো যে দেশ থেকে আসার কথা, বাস্তবে তা আসে অন্য জায়গা থেকে।
এই কাঠ মূলত আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে কাঠ আমদানি নিষিদ্ধ করে।
কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পরেও কাঠ চোরাচালান হয়ে আসছে, যা উদ্বেগের কারণ। এই চোরাচালানের ফলে একদিকে যেমন রাশিয়ার অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পরীক্ষায় কাঠের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করা হয়, যা কাঠের উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিতে দেখা গেছে, ৫২টি কাঠের নমুনার মধ্যে ২৪টির ক্ষেত্রেই তাদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।
মূলত আসবাবপত্র, কিচেন প্যানেল এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত বার্চ কাঠ নিয়েই এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া ও বেলারুশ ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে এত কাঠ আসার সম্ভাবনা কম। কারণ, এই কাঠ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্রগুলো হলো রাশিয়া ও বেলারুশ।
যুক্তরাজ্যের ‘টিম্বার ডেভেলপমেন্ট ইউকে’-এর প্রধান নির্বাহী ডেভিড হপকিন্স এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, “এই ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত অল্প কিছু কোম্পানি রয়েছে। ফিনল্যান্ডে কিছু করাতকল বার্চ কাঠ উৎপাদন করে।
বাল্টিক ও স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোতেও এর কিছু উৎপাদন হয়। তবে এর সিংহভাগই আসে রাশিয়া থেকে, যা রাশিয়ার অর্থনীতিতে সহায়তা করে এবং নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে।”
এই ঘটনার কারণে ‘FSC’ এবং ‘PEFC’ সনদ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এই সনদগুলো মূলত টেকসই বন ব্যবস্থাপনার প্রচার করে এবং বনভূমি ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে।
যদিও সংস্থা দুটি বলছে, তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছে।
এদিকে, রাশিয়া থেকে কাঠ পাচার হয়ে আসার পেছনে বিভিন্ন দেশের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়া থেকে কাঠের আমদানি কমে গেলেও, কাজাখস্তান ও তুরস্কের মতো দেশগুলো থেকে কাঠের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
জাতিসংঘের বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে কাজাখস্তান থেকে ৬০০ টন প্লইউডের রপ্তানি হলেও, ২০২২ সালে তা বেড়ে ২৬ হাজার টনে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের চোরাচালান শুধু যুক্তরাজ্যের জন্যই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে টেকসই উন্নয়ন এবং নৈতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবৈধভাবে কাঠ ব্যবসার কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
তাই, ভোক্তাদের সচেতন হওয়া এবং টেকসইভাবে উৎপাদিত কাঠ ব্যবহার করা জরুরি।
যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা কাঠের সরবরাহ শৃঙ্খলে স্বচ্ছতা আনতে এবং আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান