চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ক্রমশ বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি, রাশিয়া একটি চীনা বিমানঘাঁটি সজ্জিত ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার চুক্তি করেছে।
এই চুক্তির অংশ হিসেবে, রাশিয়া চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (PLA) সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে, যার মধ্যে সাঁজোয়া যান, ট্যাংক বিধ্বংসী কামান এবং আকাশ থেকে নামতে সক্ষম সাঁজোয়া কর্মী বহনকারী যান উল্লেখযোগ্য।
এই চুক্তির বিস্তারিত তথ্য ফাঁস হওয়া কিছু নথিপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে। যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা, রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (RUSI) এই নথিগুলো যাচাই করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়া চীনকে প্রযুক্তিও সরবরাহ করবে, যার মাধ্যমে চীন ভবিষ্যতে নিজেরাই অনুরূপ অস্ত্র তৈরি করতে পারবে।
জানা গেছে, রাশিয়ার দেওয়া প্রশিক্ষণ অনুযায়ী, চীনা প্যারাসুট বাহিনী এই সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। রুশ প্রশিক্ষকরা চীনের প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে চীনা সেনাদের অবতরণ, ফায়ার কন্ট্রোল এবং কৌশলগত দিকগুলো শেখাবেন।
এই চুক্তির ফলে চীনের আকাশ পথে দ্রুত সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েনের ক্ষমতা বাড়বে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ান দখলের ক্ষেত্রে এটি চীনকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং দ্বীপটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে আগ্রহী।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়া চীনের বিশেষ বাহিনীকে অন্য দেশের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যা তাইওয়ান, ফিলিপাইন এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দ্বীপরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, চীন এবং ফিলিপাইনের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে বিভিন্ন দ্বীপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে।
সামরিক সহযোগিতা ছাড়াও, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও জোরদার হচ্ছে। রাশিয়া বর্তমানে ইউরোপের পরিবর্তে চীনের ওপর গ্যাস সরবরাহের জন্য নির্ভরশীল হয়েছে।
দুই দেশ যৌথভাবে সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এমনকি, তারা জাপানের কাছাকাছি নৌ-মহড়া এবং আলাস্কার কাছে আকাশ ও সমুদ্র পথে টহলও দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের জন্য এই চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিমানঘাঁটির প্রশিক্ষণ। কারণ, রাশিয়ার সেনারা এই বিষয়ে যুদ্ধ-অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, যা চীনের নেই।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ। তারা মনে করেন, এই সম্পর্ক উভয় দেশের লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন