ইরান পরমাণু চুক্তিতে রাশিয়ার নতুন চাল! আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার সম্ভবনা?

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে নতুন করে আলোচনা চলছে, যেখানে রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এই আলোচনার ফলে তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে বাধা দেওয়া এবং দেশটির উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তবে, চুক্তির শর্তাবলী এবং বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

সম্প্রতি ইতালির রোমে উভয় পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হয়েছে, যেখানে ওমানের মধ্যস্থতা ছিল। এরপর জেনেভা এবং ওমানেও আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে, কিন্তু ইরানের কর্মকর্তাদের মতে, দুই পক্ষের মধ্যে গভীর আস্থার অভাব এবং কারিগরি বিষয়গুলোর জটিলতার কারণে দ্রুত চুক্তি হওয়া কঠিন।

আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত কোথায় রাখা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি ভঙ্গের ক্ষেত্রে কী ধরনের নিশ্চয়তা থাকবে। ইরান চাইছে, তাদের ইউরেনিয়াম মজুত দেশের ভেতরেই রাখতে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চাইছে হয় এটি ধ্বংস করা হোক, না হয় অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নেওয়া হোক।

যদি কোনো কারণে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি ভেঙে দেয়, তাহলে ইরানের জন্য কী ধরনের ক্ষতিপূরণ বা ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়েও নিশ্চয়তা চাইছে তেহরান। ইরান মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তিই সবচেয়ে নিরাপদ হতে পারে, কিন্তু তারা জানে যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সেখানে প্রবল থাকার কারণে এমন চুক্তি পাওয়া কঠিন।

বিকল্প হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্র যদি চুক্তি ভঙ্গ করে, তবে ইরানের ক্ষতিপূরণের দায়ভার নেওয়ার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও, চুক্তি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে ইরানের কাছে ইউরেনিয়ামের মজুত ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

যদি এমনটা হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গঠনে রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তৈরি হবে, যা জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোকে আলোচনার বাইরে রাখতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির ক্ষেত্রে এই দেশগুলোই প্রধান গ্যারান্টার ছিল।

এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে, ইরানের পক্ষ থেকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো ছাড় না দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। সম্প্রতি, সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সংহতি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো একটি ‘ন্যায্য, টেকসই ও বাধ্যতামূলক চুক্তি’ নিশ্চিত করা, যার মাধ্যমে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র থেকে মুক্ত থাকবে এবং একইসঙ্গে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার বজায় রাখতে পারবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *