রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া তাদের মধ্যেকার প্রথম সড়ক পথের সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। দুই দেশের মধ্যেকার সীমান্ত নদী, তুমেন নদীর উপর এই সেতু তৈরি করা হচ্ছে, যা দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন বুধবার এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন এবং এটিকে দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন।
মিশুস্তিন বলেন, এই সেতু নির্মাণের ফলে পণ্য পরিবহনের খরচ কমবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে এবং পর্যটনেরও প্রসার ঘটবে। তিনি উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলির চেয়ারম্যান পাক থায়ে-সং এর সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হয়ে এই মন্তব্য করেন।
মিশুস্তিন আরও যোগ করেন, “প্রকৌশলগত দিক থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তো বটেই, এর থেকেও বড় কথা হল, এটি বন্ধুপ্রতীম সম্পর্ক আরও জোরদার করা এবং আন্ত-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর একটি সাধারণ ইচ্ছার প্রতীক।”
বর্তমানে, তুমেন নদীর উপর একটি পুরনো, জং ধরা সোভিয়েত যুগের রেলওয়ে সেতু বিদ্যমান। নতুন সড়ক সেতু তৈরি হলে ব্যবসায়ীরা সহজেই পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারবে, যা পরিবহন খরচ কমিয়ে দেবে এবং পর্যটকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়ার সংবাদপত্র “কোমারসান্ত” জানিয়েছে, সেতুটি ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেতু নির্মাণ শুরুর অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের সুট পরিহিত অবস্থায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো দেখা যায়। রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে পাক থায়ে-সং এই নির্মাণকে “কোরীয়-রুশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একটি অবিচ্ছেদ্য স্মারক কাঠামো” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রিমোরি অঞ্চলের গভর্নর ওলেগ কোজেমিয়াকো। তিনি দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, অনেক খেলোয়াড় এবং শিশু সেখানে (উত্তর কোরিয়া) যায়।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার শিকার। এই পরিস্থিতিতে দেশ দুটি তাদের সম্পর্ক আরও গভীর করেছে।
উত্তর কোরিয়া প্রকাশ্যে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং এমনকি রাশিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছে বলেও জানা যায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা বুধবার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, যুদ্ধে প্রায় ৬০০ উত্তর কোরীয় সেনা নিহত হয়েছে।
এছাড়াও, ইউক্রেন অভিযোগ করেছে যে উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে ভারী অস্ত্র সরবরাহ করছে, যা তারা যুদ্ধে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে কিয়েভে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
গত বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যেখানে উভয় দেশ “আগ্রাসন”-এর শিকার হলে একে অপরকে সামরিক সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার করে।
পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ করা উত্তর কোরীয় সৈন্যদের প্রশংসা করেছেন এবং এমনকি ৯ই মে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের রেড স্কোয়ারে কুচকাওয়াজ করানোর কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা