যুদ্ধবিরতি: ইউক্রেনের প্রস্তাব উড়িয়ে দিল রাশিয়া, উত্তেজনা চরমে!

ইউক্রেনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া, যা যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়ানোর কথা ছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণা করা স্বল্পকালীন যুদ্ধবিরতিকে ৩০ দিন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল ইউক্রেন।

তবে মস্কো জানিয়েছে, কয়েকটি ‘প্রশ্ন’-এর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া কঠিন। খবরটি জানা গেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা থেকে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পক্ষ থেকে আসা প্রস্তাবটি তারা পেয়েছেন। পুতিনের পক্ষ থেকে ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলে যায়।

জেলেনস্কি এই যুদ্ধবিরতিকে ‘চক্রান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, কিয়েভের পক্ষ থেকে অন্তত ৩০ দিনের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানে কেন রাজি হবে না মস্কো?

অন্যদিকে, পেসকভ জেলেনস্কির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইউক্রেন পুতিনের তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রতি ‘সরাসরি প্রতিক্রিয়া’ না জানানোটাও ‘চক্রান্ত’। এমন পরিস্থিতিতে, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে চাপ বাড়ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনকে ‘গুলি বন্ধ করতে’ এবং একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বলেছেন।

গত মাসে, যুক্তরাষ্ট্রও ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু রাশিয়া সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তারা ইউক্রেনকে এই বিরতির সময় তাদের সামরিক শক্তি পুনরায় সংগঠিত করা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার মতো শর্ত জুড়ে দেয়।

যদিও ইউক্রেন এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি ‘অবিলম্বে, সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্ত হতে হবে – অন্তত ৩০ দিনের জন্য, যাতে এটি সুরক্ষিত এবং নিশ্চিত করা যায়’।

এদিকে, মঙ্গলবার ভোরে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়পক্ষই ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ডনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার হামলায় ১২ বছর বয়সী এক কিশোরী নিহত হয়েছে এবং আরও তিনজন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬ বছর বয়সী একটি শিশুও রয়েছে।

এছাড়া, রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে ২০টি ড্রোন ও ৩১টি শক্তিশালী গাইডেড বোমা নিক্ষেপ করেছে। রাজধানী কিয়েভের একটি আবাসিক এলাকায় একটি রুশ ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর আগুন ধরে যায়।

ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর তথ্যমতে, সোমবার রাতের শেষ ভাগ থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেনে ১০০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

অন্যদিকে, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বেলгород অঞ্চলে একটি চলমান গাড়িতে ড্রোন হামলায় পাঁচজন পুরুষের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ।

রুশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাওয়া ৪০টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে চারটি ছিল ক্রিমিয়া উপদ্বীপের ওপর দিয়ে। মস্কো থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি ইউলিয়া শাপোভালোভা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা নিয়মিত হামলার শিকার হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘সংঘাত শুরুর পর থেকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চলের ডজনখানেক শহর ও গ্রামে প্রায়ই হামলা হচ্ছে। কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীও বেলгород সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় সেনা সমাবেশ করছে।’

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *