ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া: কমছে জনসংখ্যা, উদ্বিগ্ন কেন?

**রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস: সঙ্কট ও ভবিষ্যৎ**

গত কয়েক দশক ধরেই রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাসের সমস্যা দেশটির নীতিনির্ধারকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, জন্মহার কমছে, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি গুরুতর সঙ্কট সৃষ্টি করছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও, মূল সমস্যাগুলো এখনো বিদ্যমান।

১৯৯০ সাল থেকে রাশিয়ার জনসংখ্যা কমতে শুরু করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং জীবনযাত্রার মানের অবনতি এর প্রধান কারণ ছিল।

বর্তমানে, ইউক্রেন যুদ্ধ, তরুণ প্রজন্মের দেশত্যাগ এবং অভিবাসন নীতি জনসংখ্যার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে রাশিয়ার জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৭৬ লক্ষ, যা বর্তমানে ১৪ কোটি ৬১ লক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, রাশিয়ার জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধ হচ্ছে। ১৯৯০ সালে যেখানে ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ছিল ২১.১ শতাংশ, সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে।

জন্মহার কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালের পর থেকে প্রতি বছরই জন্মহার কমছে।

গত বছর, জীবিত শিশুর জন্মের সংখ্যা ছিল মাত্র ১২ লক্ষ ২০ হাজার, যা ১৯৯৯ সালের কাছাকাছি।

এই পরিস্থিতিতে সরকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া মায়েদের জন্য সোভিয়েত আমলের ‘হিরো-মাদার’ পদক প্রদান, আর্থিক সহায়তা এবং বিভিন্ন প্রণোদনা।

সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, পরিবার-বান্ধব নীতি এবং ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক মূল্যবোধের প্রচার এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।

তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি জন্মহার কমার প্রধান কারণ। অনেকের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবার শুরু করার মতো মানসিকতা তৈরি হচ্ছে না।

তাছাড়া, গর্ভপাতের ওপর বিধিনিষেধ এবং ‘শিশুবিহীন জীবনযাত্রা’র ধারণাকে নিরুৎসাহিত করার সরকারি নীতিও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

রাশিয়ার সরকার অভিবাসন সীমিত করার চেষ্টা করছে।

তবে, জনসংখ্যার এই সঙ্কট মোকাবিলায় অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার এই জনমিতিক সংকট একটি জটিল সমস্যা, যার সমাধান সহজ নয়। জন্মহার বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থিতিশীল পরিবেশ।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *