ভয়ংকর শাস্তি! পুতিনের বিরুদ্ধে যেতে চাওয়া সৈন্যদের সাথে যা হচ্ছে, শুনলে গা শিউরে উঠবে

যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করতে রাজি না হওয়ায় রুশ সেনাদের উপর চালানো হচ্ছে ভয়াবহ নির্যাতন। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সেনারা তাঁদের কমান্ডারদের কঠোর শাস্তির শিকার হচ্ছেন। তাঁদের বেঁধে রাখা হচ্ছে গাছে, অথবা রাখা হচ্ছে লোহার কন্টেইনারে।

কেউ কেউ আবার সেনাদের মারধর করছেন এবং অপমান করছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সেনারা যুদ্ধ করতে রাজি না হওয়ায় তাঁদের শাস্তি দেওয়ার এই প্রক্রিয়া নিয়ে সেনাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সৈন্যদের ধারণা, তাঁদের ‘বাবা ইয়াগা’র শিকার হতে হচ্ছে। ‘বাবা ইয়াগা’ হলো স্লাভীয় লোককথার এক ভয়ঙ্কর ডাইনীর নাম, যে তার শিকারদের ভোজন করে।

প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, সৈন্যদের গাছে বেঁধে রাখা হচ্ছে, যেন ইউক্রেনের ড্রোন তাঁদের খুঁজে বের করতে পারে। একজন রুশ সেনা জানান, তিনি কামেন্স-ইউরালস্কি শহর থেকে এসেছেন।

তিনি ইউক্রেনীয় ড্রোনের ভয়ে তাঁর পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর তাঁকে এক সহকর্মী ‘৩০০’ বানানোর প্রস্তাব দেন, যা রুশ ভাষায় আহত সৈনিক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

ওই সেনা জানান, তাঁর সহকর্মী তাঁকে গুলি করতে বলেন এবং তিনিও পাল্টা গুলি করার কথা বলেন। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁকে গুলি করা হয় এবং পরে তাঁর দলের সেনারা তাঁকে ধরে ফেলে।

এরপর তাঁকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ক্যামেরার পেছনের একজন তখন বলেন, ‘ড্রোন আসছে, সে তোকে শেষ করে দেবে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা ভিডিওগুলোতে সৈন্যদের চরম হতাশা ও ভয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেক সেনা তাঁদের পরিবারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন।

ইউরি দরিয়াগিন নামের এক ব্যক্তি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে সাহায্য চেয়ে ভিডিও পোস্ট করেছেন। তিনি জানান, ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে যুদ্ধ করার সময় তাঁর কোম্পানির মাত্র ৩২ জন সেনা জীবিত ছিলেন।

অথচ একটি কোম্পানিতে সাধারণত ১৫০ জন পর্যন্ত সেনা থাকে। যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত সৈন্যদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া থেকে বাঁচতে অনেক সময় তাঁদের মৃত্যুর খবর গোপন করা হয়।

দরিয়াগিন আরও অভিযোগ করেন, কিছু কমান্ডার যারা লড়াই করতে রাজি হননি, তাঁদের গুলি করেছেন।

‘গেট লস্ট’ নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিগরি স্ভার্ডলিন, জানিয়েছেন, সেনারা যুদ্ধ ছেড়ে পালাতে চাইছে কারণ তাঁদের জীবন তাঁদের কমান্ডারদের কাছে কোনো মূল্য রাখে না।

স্ভার্ডলিনের মতে, একজন রুশ অফিসারের কাছে একটি ট্যাংক বা গাড়ি হারানোর চেয়ে ১০-২০ জন সৈন্য হারানো কোনো সমস্যা নয়। অনেক সেনা তাঁদের কর্মকর্তাদের বলতে শুনেছেন যে, ‘তোমরা সবাই এক সপ্তাহের মধ্যে মারা যাবে’।

শাস্তি হিসেবে সেনাদের বন্দী করা, মারধর করা এবং অপমান করার ঘটনাগুলো সৈন্যদের মধ্যে ভীতি তৈরি করছে। ডেজারশন বা যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে সৈন্যদের ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

পশ্চিমি সরকার ও বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার মতে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ রুশ সেনা হতাহত হয়েছেন। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল সম্প্রতি বলেছেন, শুধু ২০২৫ সালেই এক লক্ষ রুশ সেনা নিহত হয়েছে।

অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যেও মনোবল ও যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করার প্রবণতা দেখা যায়, তবে তাঁদের মধ্যে রাশিয়ার সেনাদের মতো যুদ্ধ নিয়ে দ্বিধা বা অনীহা অনেক কম।

স্ভার্ডলিনের মতে, রুশ সেনারা প্রায়ই বলেন, ‘আমি এখানে মরতে চাই না’। তাঁদের সাধারণ কথা হলো, ‘এটা আমাদের যুদ্ধ নয়, আমরা বুঝি না এখানে কী হচ্ছে’।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *