শিরোনাম: দক্ষিণ আফ্রিকায় রাশিয়ার ‘উপনিবেশবাদ-বিরোধী’ ভাষ্যের প্রভাব, অতীতের যোগসূত্র ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে রাশিয়ার প্রভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে.
সম্প্রতি, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনেক পশ্চিমা দেশ যখন রাশিয়ার নিন্দা জানাচ্ছে, তখন বিভিন্ন কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের মধ্যে মস্কোর প্রতি সহানুভূতি দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে কাজ করছে একটি শক্তিশালী ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, যা রুশ সাম্রাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কালে গড়ে উঠেছিল।
১৯৮০-র দশকে, শ্বেতাঙ্গ তরুণী সু ডবসনকে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির প্রশিক্ষণ নিতে মস্কো পাঠানো হয়েছিল। তিনি জানান, সোভিয়েত ইউনিয়নে তার প্রশিক্ষণ ছিল বেশ কঠিন।
সেখানে তিনি কীভাবে অনুসরণকারীদের চিহ্নিত করতে হয়, গোপন বার্তা লিখতে হয় এবং ছবি তুলতে হয়, সেই বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ পান।
ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাশিয়ার এই ‘উপনিবেশবাদ-বিরোধী’ ভাবমূর্তি তৈরীর পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা। উনিশ শতকে অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তি যখন আফ্রিকা মহাদেশকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিচ্ছিল, তখন রাশিয়া ইথিওপিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিল।
ইতালির বিরুদ্ধে ইথিওপিয়ার যুদ্ধে রাশিয়া অস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছিল। যদিও রাশিয়ার নৌ-সামরিক শক্তি না থাকায় সরাসরি আফ্রিকার কোনো দেশ দখল করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি, তবে বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন উপায়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে।
cold war চলাকালীন সময়ে, সোভিয়েত ইউনিয়ন অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক ও কঙ্গোর মতো দেশগুলোতে পশ্চিমা সমর্থিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। এছাড়াও, মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসেরের সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক ছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন অস্ত্র ও অবকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করত।
সোভিয়েত ইউনিয়ন শুধু যে উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জুগিয়েছে তা নয়, তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে।
এর মাধ্যমে তারা যেমন বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করত, তেমনি ঐ দেশগুলো থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ কম দামে আমদানি করত।
আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে মস্কো ‘প্যাট্রিস লুমুম্বা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ জন আফ্রিকান শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হতো।
তবে, এখানে কিছু ক্ষেত্রে বর্ণবাদের অভিযোগও পাওয়া যায়। ১৯৬৩ সালে ঘানার এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় এর প্রমাণ মেলে।
এএনসি’র সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক ছিল গভীর। তারা ১৯৬০-এর দশক থেকে এএনসি’কে সমর্থন জুগিয়েছে এবং তাদের সশস্ত্র সংগঠন ‘উমখন্টো উই সিজওয়ে’ (MK)-কে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
সু ডবসনের মতে, এএনসি’র ক্ষমতায় আসতে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদান অনস্বীকার্য।
বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল এএনসি। যদিও তারা রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন নিয়ে সরাসরি কোনো নিন্দা জানায়নি, তবে অতীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।
এর প্রমাণ পাওয়া যায় যখন দেশটির অনেক শীর্ষ নেতা সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রশিক্ষণ অথবা পড়াশোনা করেছেন। এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও রাশিয়ার প্রতি সমর্থন দেখা যায়।
ফেব্রুয়ারিতে ডারবানে ইউক্রেনীয়দের একটি ছোট সমাবেশে রাশিয়ার পতাকা হাতে কিছু লোক ‘সিগমা বয়’ গান বাজিয়ে প্রতিবাদ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এই ‘উপনিবেশবাদ-বিরোধী’ ভাষ্য বিভিন্ন দেশের শাসকগোষ্ঠীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে মিলে যায়।
তবে, অতীতের দিকে তাকালে রাশিয়ার বিভিন্ন দুর্বলতাও চোখে পড়ে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা