যুদ্ধ বন্ধে নতুন প্রস্তাব! রাশিয়া-ইউক্রেন কি রাজি?

কৃষ্ণ সাগর চুক্তি: রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের মাঝে নতুন সমীকরণ?

আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্য এবং সারের সরবরাহ স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি নতুন চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির ফলে কৃষ্ণ সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, রাশিয়ার কৃষি পণ্য ও সারের রপ্তানি সহজ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

খবর অনুযায়ী, উভয় দেশই এই চুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার কৃষি ও সার বিষয়ক পণ্য বিশ্ব বাজারে প্রবেশে সহায়তা করবে।

বিনিময়ে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা দিতে রাজি হয়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে আলোচনা করেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।

রাশিয়া এই অঞ্চলে সামরিক কার্যক্রম জোরদার করায় খাদ্যশস্যের সরবরাহ ব্যাহত হয়, যার প্রভাব বিশ্বজুড়ে দেখা যায়।

চুক্তি অনুযায়ী, কৃষ্ণ সাগরে কোনো পক্ষই শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে না এবং বাণিজ্যিক জাহাজের সামরিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। রাশিয়া চাইছে, তাদের কৃষি ব্যাংক ‘রোজেলখোজ ব্যাংক’-এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক খাদ্য বাণিজ্য সংস্থাগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পাশাপাশি সুইফট (SWIFT) ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছে তারা। সুইফট হলো আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যা নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

এই চুক্তির প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ই তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতাকে স্বাগত জানিয়েছে। অতীতে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য পরিবহনের একটি চুক্তি হয়েছিল, যা ‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ’ নামে পরিচিত।

কিন্তু রাশিয়া সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় খাদ্যশস্যের সরবরাহ আবারও ব্যাহত হয়।

তবে, ইউক্রেন এই চুক্তির বিষয়ে এখনো পর্যন্ত সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তাদের আশঙ্কা, রাশিয়া হয়তো চুক্তির শর্ত পুরোপুরি মানবে না।

ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানতে চায় এবং প্রয়োজনে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।

বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে, তবে এর কার্যকারিতা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে কৃষ্ণ সাগরে সামরিক তৎপরতা কমে এসেছে।

অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করছেন, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে সহায়ক হতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোও এই বিষয়ে আলোচনা করছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে একটি জোট গঠনের পরিকল্পনা করছেন।

তবে, সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউরোপীয় দেশগুলোর কোনো প্রতিনিধি ছিল না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই চুক্তির ফলে বিশ্ব বাজারে খাদ্যশস্যের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, চুক্তির শর্তগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা না হলে, এর সুফল পাওয়া কঠিন হবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *