পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের আগে, ইউক্রেন নিয়ে অনড় দুই দেশ!

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান সংকট এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। উভয় দেশই তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব।

ধারণা করা হচ্ছে, আলাস্কার এই শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যেতে পারে। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের অনমনীয় মনোভাবের কারণে আলোচনার ফল পাওয়া কঠিন হতে পারে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, তা এখনো পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। জানা গেছে, আসন্ন বৈঠকে পুতিন এমন একটি বৃহত্তর চুক্তির চেষ্টা করবেন, যা কেবল রাশিয়ার আঞ্চলিক অর্জনকে সুসংহত করবে না, বরং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখবে এবং পশ্চিমা সেনা মোতায়েনও রুখে দেবে।

এর মাধ্যমে মস্কো ইউক্রেনকে ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব বলয়ে ফিরিয়ে আনতে পারবে।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তিনি ন্যাটো সদস্যপদ লাভের বিষয়ে তার অটল প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং রাশিয়ার কোনো অঞ্চলের সংযুক্তিকরণকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয় পক্ষই বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় রাশিয়া একটি প্রস্তাব দেয়, যেখানে তারা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য দুটি শর্তের কথা উল্লেখ করে।

প্রথম শর্তে ইউক্রেনকে চারটি অঞ্চল (ডনেটস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন) থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বলা হয়। এই চারটি অঞ্চলকে রাশিয়া ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অবৈধভাবে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেছে, যদিও তাদের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখনো পর্যন্ত নিতে পারেনি।

যুদ্ধবিরতির বিকল্প হিসেবে রাশিয়া আরেকটি প্রস্তাব দেয়। সেখানে ইউক্রেনকে সেনা সমাবেশ বন্ধ করা, পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করা এবং তাদের ভূখণ্ডে তৃতীয় কোনো দেশের সেনা মোতায়েন নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়।

এছাড়াও, রাশিয়া ইউক্রেনকে যুদ্ধকালীন আইন বাতিল করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেয়, যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে একটি ব্যাপক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে। রাশিয়া চায়, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেন যেন রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখে এবং ন্যাটোতে যোগদানের চেষ্টা বন্ধ করে দেয়।

একইসঙ্গে, তারা ইউক্রেনকে তাদের সামরিক বাহিনীর আকার সীমিত করতে এবং রুশ ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিতেও চাপ দিচ্ছে। রাশিয়া আরও চায়, ইউক্রেন যেন “নাৎসিবাদ ও নব্য-নাৎসিবাদ” এর প্রচার বন্ধ করে এবং জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে বিলুপ্ত করে।

অন্যদিকে, ইউক্রেনও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের প্রস্তাব পেশ করেছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ ও শর্তহীন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিয়েছে, যা শান্তি আলোচনার পথ সুগম করবে। ইউক্রেন রাশিয়ার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে যে, তাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

তারা মনে করে, জোট গঠনের স্বাধীনতা তাদের আছে এবং ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি জোটের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। ইউক্রেন তাদের সশস্ত্র বাহিনীর আকার বা বিদেশি সেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা মানতে রাজি নয়।

তারা রাশিয়ার কোনো আঞ্চলিক অর্জনকে স্বীকৃতি দিতেও নারাজ।

এই পরিস্থিতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প এর আগে পুতিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং যুদ্ধের বিষয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।

তবে, ইউক্রেন ও তার মিত্ররা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে ইউক্রেনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন, যা তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই বলেছেন, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে উভয় দেশের “আঞ্চলিক অদলবদল” হতে পারে, যা উভয় পক্ষের জন্যই উপকারী হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন সম্ভবত এখনই তার লক্ষ্য থেকে সরবেন না। তিনি এমন একটি যুদ্ধবিরতি চাইবেন, যা তাকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতে আগ্রাসনের পথ খোলা রাখবে। তাদের মতে, পুতিনের একমাত্র লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের সমর্থন আদায় করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া মনে করেন, পুতিন তার লক্ষ্য থেকে সরবেন না। তিনি বলেন, রাশিয়া হয়তো আলোচনার টেবিলে নমনীয়তা দেখানোর ভান করবে, কিন্তু মূল অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে— কিয়েভকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এই নিবন্ধটি তৈরি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *