যুদ্ধ বিরতির আলোচনা: শান্তি নাকি নতুন ফাঁদ? পুতিনের চালে বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য!

ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর অনেকেই মনে করছেন, যুদ্ধ বন্ধের একটি পথ হয়তো তৈরি হতে পারে।

তবে, বিশ্লেষকদের একাংশ এই আলোচনাকে ভিন্নভাবে দেখছেন। তাদের মতে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত আলোচনার আড়ালে কৌশলগত সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন।

আলোচনা শুরুর ঘোষণার পরপরই ইউরোপ এবং ইউক্রেনের পর্যবেক্ষকরা তাদের সন্দেহের কথা জানিয়েছেন। তাদের মতে, পুতিন মূলত আলোচনার মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করতে চাইছেন এবং এর মাধ্যমে ইউক্রেনের আরও কিছু ভূখণ্ড দখলের ফন্দি আঁটছেন।

তারা আরও মনে করেন, আলোচনার আড়ালে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়াতেও চাইছেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, পুতিনের মূল লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা। তারা বলছেন, আলোচনার টেবিলে বসার মাধ্যমে পুতিন সম্ভবত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যবহার করছেন, যাতে পশ্চিমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যায় এবং ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করা যায়।

অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে আলোচনা শুরুর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। রুশ কর্মকর্তাদের মতে, এই আলোচনা ইউক্রেনের জন্য একটি “ফলাফল-প্রসূ” সমাধান আনতে পারে।

তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া আলোচনার শর্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন সম্ভবত আলোচনার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে পারেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তার সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে আরও কিছু এলাকা দখল করতে পারে। এমনকী, তারা সম্ভবত ক্রিমিয়াকে জল সরবরাহকারী গুরুত্বপূর্ণ কাখোভকা বাঁধটি পুনরায় নির্মাণের চেষ্টা করতে পারে, যা ২০২৩ সালে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া এই নিষেধাজ্ঞাগুলো তেমন কার্যকর হবে না।

কারণ, পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চান, যাতে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর মার্কো রুবিও মনে করেন, রাশিয়া যদি শান্তি আলোচনায় আগ্রহী না হয়, তাহলে তাদের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। তবে, এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার উপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে রাজি নয়।

আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। রুশপন্থী বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আলোচনা ইউক্রেনকে রাশিয়ার শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করতে পারে, যা শান্তির পথ খুলে দেবে।

অন্যদিকে, ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় নেতারা এই আলোচনাকে তাদের জন্য বিপর্যয় হিসেবে দেখছেন। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্প সম্ভবত পুতিনের সঙ্গে অনেক বিষয়ে একমত হয়েছেন।

সব মিলিয়ে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। আলোচনা ফলপ্রসূ হবে কিনা, নাকি এটি কেবলই একটি কৌশল, তা সময়ই বলবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *