যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনার কোনো নতুন তারিখ এখনো পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি। ক্রেমলিন বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে, গত সপ্তাহে উভয় পক্ষের মধ্যে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে বন্দী বিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে, শান্তি প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর প্রক্রিয়াটি এখনো পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি।
রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, “পরবর্তী বৈঠকের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট চুক্তি হয়নি।
এগুলো এখনো চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
গত ১৬ই মে, ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত দুই ঘণ্টার বৈঠকে কিয়েভ ও মস্কো উভয় পক্ষই ১০০০ জন করে যুদ্ধবন্দীকে বিনিময় করতে রাজি হয়। এটি ছিল উভয় পক্ষের মধ্যে হওয়া বৃহত্তম বন্দী বিনিময় চুক্তি।
কিন্তু এই পদক্ষেপের বাইরে, বৈঠকটি কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য আনতে পারেনি।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় এবং পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া সম্ভবত গ্রীষ্মকালে ইউক্রেনের আরও বেশি এলাকা দখলের জন্য একটি বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, মস্কো একটি “স্মারক” তৈরির জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যা “ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির” রূপরেখা দেবে।
তবে, ইউক্রেন এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেও, পুতিন যুদ্ধবিরতির জন্য বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের সেনা সমাবেশ বন্ধ করা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করা।
ইউরোপীয় নেতারা পুতিনের বিরুদ্ধে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ এনেছেন।
তাদের মতে, পুতিন সম্ভবত তার বিশাল সামরিক শক্তির সুবিধা নিতে এবং ইউক্রেনের আরও বেশি অঞ্চল দখল করতে চাইছেন।
বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়াটিকে একটি “সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া” হিসেবে উল্লেখ করে পেসকভ বলেন, “এই কাজটি দ্রুত গতিতে চলছে এবং সবাই এটি দ্রুত সম্পন্ন করতে আগ্রহী।
পেসকভ আরও জানান, মস্কো কিয়েভকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক বন্দীদের একটি তালিকা সরবরাহ করেছে।
তিনি বলেন, “আমরা এখনো কিয়েভের কাছ থেকে পাল্টা তালিকা পাইনি। আমরা অপেক্ষা করছি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার বলেছেন, তুরস্কের বৈঠকের “সম্ভবত একমাত্র বাস্তব ফল” হিসাবে চিহ্নিত বন্দী বিনিময়ের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে উভয় পক্ষের মধ্যে ড্রোন হামলার ঘটনাও বেড়ে চলেছে।
মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা গত রাতে ইউক্রেনের ১০৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ৩৫টি মস্কো অঞ্চলের উপরে ছিল।
কিয়েভ বাহিনী টানা দ্বিতীয় রাতে রাশিয়ার রাজধানী লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া গত রাতে ১২৮টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এর মধ্যে, ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় ডনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে একটি শিল্প স্থাপনা, বিদ্যুতের লাইন এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে ক্ষতি হয়েছে।
রাজধানী কিয়েভেও একটি রুশ ড্রোন ধ্বংসাবশেষ একটি স্কুলের আঙিনায় পড়েছিল।
রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় গোলার আঘাতে একজন নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি কুরস্ক অঞ্চল সফর করেন।
তিনি বলেন, রাশিয়ার বাহিনী সীমান্ত বরাবর একটি “নিরাপত্তা অঞ্চল” তৈরি করার নির্দেশ পেয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস