যুদ্ধ যখন থামছে না: ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রাসন, শান্তি আলোচনার প্রস্তুতি
ইউক্রেনে শান্তি আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়ার মধ্যেই দেশটির পূর্বাঞ্চলে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে রাশিয়া। সম্প্রতি ডনেৎস্ক অঞ্চলের কোটলিয়ারভকা গ্রামটি নিজেদের দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার তারা এলাকাটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এর ফলে ডনেটস্ক ও ডনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের মধ্যেকার সীমান্ত থেকে মাত্র ৩.৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে রুশ সেনারা।
শুধু তাই নয়, পোকরোভস্কের পূর্বে অবস্থিত মিরোলিউবিোভকা গ্রামেও প্রবেশ করেছে রুশ বাহিনী। তাদের দাবি, গ্রামটি সম্পূর্ণরূপে তাদের নিয়ন্ত্রণে।
বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ডনেৎস্কের মিখাইলোভকাও দখল করেছে।
যদিও ছোট ছোট এলাকার দখল নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু শান্তি আলোচনার প্রস্তুতি সত্ত্বেও ডনেৎস্ক এবং অন্যান্য অঞ্চলে রাশিয়ার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার মতে, রাশিয়া নতুন করে বড় ধরনের আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে, ৮ই মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। পোল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান।
তবে, ক্রেমলিন যুদ্ধবিরতি ছাড়াই শান্তি আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছে। তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আলোচনা হতে পারে।
তিনি সেখানে শর্ত ছাড়াই শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আমরা এই আলোচনায় নতুন যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধ বিরতির বিষয়ে একমত হতে পারি।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, পুতিন যদি আসেন, তবে তিনিও ইস্তাম্বুলে বৈঠকে যোগ দেবেন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা উপযুক্ত পর্যায়ে বৈঠকে অংশ নেবে, তবে রুশ প্রতিনিধিদের তালিকায় পুতিনের নাম দেখা যায়নি।
জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “পুতিন যদি না আসেন, তবে এটা স্পষ্ট হবে যে রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রস্তুত নয়।” তিনি নতুন করে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন। তিনি এই কূটনৈতিক উদ্যোগের কৃতিত্ব দাবি করে বলেছেন, “আমি এই বৈঠকের জন্য জোর দিয়েছিলাম এবং এটি হচ্ছে।”
অন্যদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এই আলোচনার আয়োজন করছেন। ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে মনে করেন, “ইউক্রেন সংকটকে একটি গঠনমূলক স্তরে নিয়ে আসার জন্য এই সপ্তাহে এবং আগামী ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সুযোগ রয়েছে।”
পুতিনের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের নেতাদের বৈঠকের পরই শান্তি আলোচনার প্রস্তাব আসে। রবিবার ভোররাতে তিনি দক্ষিণ ওশেটিয়ার নেতার সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে মস্কোতে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা ২৩ জন নেতার সঙ্গে তিনি চার দিন বৈঠক করেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি গণমাধ্যমকে জানান, নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এর দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তিনি তুরস্কের মাধ্যমে ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং বিদেশি অংশীদারদের শান্তি- ориенти পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানান।
ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা চীনের কাছ থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য সমর্থনের বার্তা পেয়েছে। সম্ভবত চীনও রাশিয়াকে শান্তির পথে আসার জন্য চাপ দিচ্ছে।
তবে, আলোচনার আগে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পুতিনের বক্তব্যে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের অভাব ছিল। তিনি বলেন, “এখন বল কিয়েভ সরকার এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কোর্টে, যারা তাদের জনগণের স্বার্থের পরিবর্তে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দ্বারা পরিচালিত হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত চালিয়ে যেতে চাইছে।”
রাশিয়া আলোচনার জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, রাশিয়া কিয়েভ সরকারের ‘ডিনাজिफिकेशन’ এবং ‘বর্তমান বাস্তবতাকে’ স্বীকৃতি দেওয়ার ওপর জোর দেবে।
অর্থাৎ, তারা কোনো আঞ্চলিক ছাড় দেবে না।
অন্যদিকে, আলোচনার প্রাক্কালে পুতিন ডেলোভায়া রসিয়া (বিজনেস রাশিয়া) অ্যাসোসিয়েশনে ইউক্রেনের রুশ-অধিকৃত অঞ্চলগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করার প্রস্তাব করেন।
এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, কোনো আঞ্চলিক ছাড় দেওয়া হবে না।
এই পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা