যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় ড্রোন এড়াতে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়াচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দানে রুশ সামরিক বাহিনী তাদের কৌশলগত পরিবর্তনে নতুন রূপে মোটরসাইকেল এবং কোয়াড বাইকের ব্যবহার বাড়াচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, সামনের মাসগুলোতে বড় ধরনের আক্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে রাশিয়া এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনীয় ড্রোনের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং দ্রুতগতিতে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
সম্প্রতি, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, দুই বা তিনজন মোটরসাইকেল আরোহীর একটি দল সামরিক কৌশল অনুশীলন করছে। ইলেক্ট্রনিক সঙ্গীতের তালে তালে তারা একটি নির্দিষ্ট পথে বাইক চালাচ্ছিল।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে রুশ বাহিনী ইউক্রেনীয় ড্রোনের আক্রমণ এড়াতে বিভিন্ন ফ্রন্ট লাইনে মোটরসাইকেল এবং কোয়াড বাইক ব্যবহার করছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার’ (Institute for the Study of War) বলছে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপ সম্ভবত মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়ানোর একটি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ।
ইউক্রেন আশা করছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রাশিয়া বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাবে। তারা চাইছে, কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আগেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকা নিজেদের দখলে নিতে।
ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী মোটরসাইকেল ব্যবহার করে চালানো আক্রমণকে ‘বানজাই অ্যাটাক’ হিসেবে অভিহিত করছে। একজন ইউক্রেনীয় কমান্ডার, আন্দ্রি ওচেনাশ, জানিয়েছেন, দ্রুতগতিতে আক্রমণ চালানোর জন্য এই মোটরসাইকেলগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা দ্রুত শত্রু লাইনের পেছনে পৌঁছে যেতে পারে। তবে এতে রাশিয়ার পক্ষে হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেশি হচ্ছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কৌশলগত যোগাযোগ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, “এটা প্রমাণ করে যে, রাশিয়ার কাছে হয়তো পর্যাপ্ত সামরিক সরঞ্জাম নেই। তাই তারা যুদ্ধের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে চাইছে।”
শনিবার, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা দোনেৎস্কের বাখমুতে রাশিয়ার একটি আক্রমণ প্রতিহত করেছে। এতে ১৫টি মোটরসাইকেল ধ্বংস হয়েছে এবং প্রায় ৪০ জন রুশ সেনা নিহত হয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী ড্রোন ব্যবহার করে খোলা প্রান্তরে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ধ্বংস করার ভিডিও প্রকাশ করেছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল, রাশিয়ান সেনারা দোনেৎস্কের কাছাকাছি, চাসিভ ইয়ার অঞ্চলে কোয়াড বাইকের ব্যবহার বাড়িয়েছে। গত এক বছরে এখানে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ইউক্রেনীয় সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পাভলো শামশিন বলেছেন, মোটরসাইকেলের ব্যবহার রাশিয়ান সৈন্যদের জন্য একদিকে যেমন সুবিধা নিয়ে আসছে, তেমনই কিছু অসুবিধাও রয়েছে। দ্রুতগতি এবং সহজে চলাচলের সুবিধার কারণে তারা ইউক্রেনীয় ড্রোনকে ফাঁকি দিতে পারছে। কিন্তু বাইকের শব্দ এতটাই বেশি যে, তারা ড্রোনের শব্দ শুনতে পায় না।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম মোটরসাইকেল ইউনিটের সুবিধাগুলো তুলে ধরছে। গত সপ্তাহে ‘রাশিয়া টুডে’ (Russia Today) -তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল আরোহীরা মাইন স্থাপন করছে। প্রতিবেদনে নতুন একটি মোটর ইউনিট, অর্থাৎ ৩৯তম গার্ডস মোটর রাইফেল ব্রিগেডের একজন সৈনিকের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে।
ওই সৈনিক বলেন, “আমাদের প্রধান সুবিধা হলো, আমরা সরাসরি শত্রুর অবস্থানে প্রবেশ করতে পারি এবং সবাইকেই নির্মূল করতে পারি। শত্রুরা যখন মোটরসাইকেলের শব্দ শোনে, তখন তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারা তাদের অবস্থান ছেড়ে পালায়।”
আহত সেনাদের সরানোর কাজেও রাশিয়া মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা ‘জভেজদা’ -র টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত সপ্তাহে জানানো হয়, কুরস্ক অঞ্চলে যুদ্ধরত রুশ নৌ সেনারা বেসামরিক লোক ও আহত সৈন্যদের সরানোর জন্য অল-টেরেইন মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, কাদাযুক্ত মাঠে একজন আহত সৈনিককে একটি বাইকের পেছনে বসানো হচ্ছে।
গত বছর যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, রুশ বাহিনী রাতের বেলা আক্রমণে অফ-রোড বাইক এবং অল-টেরেইন ভেহিক্যালস-এর ব্যবহার বাড়াচ্ছে। তবে তারা এও উল্লেখ করেছে, ইউক্রেনীয় এফপিভি ড্রোন, যা সরাসরি লক্ষ্যে আঘাত হানে, তা প্রমাণ করেছে, এ ধরনের অরক্ষিত যানগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
২০২৩ সালের শেষের দিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের তৈরি করা অল-টেরেইন ভেহিক্যালস পরিদর্শন করেন, যা রাশিয়ান সেনাবাহিনীর জন্য কেনা হয়েছিল। সে সময় প্রায় ৫০০টি এই ধরনের যান ব্যবহার করা হচ্ছিল এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও প্রায় ১,৫০০টির বেশি ভেহিক্যালস-এর অর্ডার দেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন