যুদ্ধবিরতি ভেঙে কিয়েভের ওপর হামলা! বিজয় দিবসে পুতিনের প্রতিশোধ?

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে সামরিক অভিযান জোরদারের মধ্যেই মস্কোতে অনুষ্ঠিত হলো বিজয় দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই আয়োজনের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়া এই কুচকাওয়াজে অংশ নেয় ১১ হাজারের বেশি সেনা সদস্য। পুতিন তাঁর ভাষণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন রাশিয়া সবসময়ই “নাৎসিবাদ, রুসোফোবিয়া ও ইহুদি বিদ্বেষের” বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া এখনো কিয়েভ সরকারকে “নাৎসি” আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইউক্রেন এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে, ইউক্রেন এই কুচকাওয়াজকে “ভণ্ডামি” হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিয়েভ কর্তৃপক্ষের মতে, এই আয়োজনের সঙ্গে নাৎসিদের বিরুদ্ধে বিজয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা অভিযোগ করে যে, কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া সেনারা সম্ভবত ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা ছিল জোরদার। ইউক্রেনীয় হামলার আশঙ্কায় মস্কোর ইন্টারনেট সংযোগে বিঘ্ন ঘটানো হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাশিয়া ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। যদিও কিয়েভ এটিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বর্ণনা করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের চাপ কমাতে এবং সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি আলোচনা এড়ানোর চেষ্টা।

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই দুপক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছে। ইউক্রেন জানায়, রাশিয়া তাদের সুমি অঞ্চলে বোমা হামলা চালিয়েছে। এছাড়া, খেরসন ও দিনপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলেও হামলার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে দুইজন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের সীমান্তবর্তী বেলগোরদ ও কুর্স্ক অঞ্চলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে এবং তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

এদিকে, ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য পুতিন ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রায় ২০টি ইউরোপীয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউক্রেনের পশ্চিমা শহর লিভিভে মিলিত হয়ে এই বিষয়ে একটি দলিল স্বাক্ষর করেন। এই ট্রাইব্যুনাল আগামী বছর থেকে কাজ শুরু করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা একটি ন্যায় ও স্থায়ী শান্তি, একটি নিরাপদ ইউরোপ এবং জবাবদিহিতা ও বিচারের পক্ষে।

অন্যদিকে, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহার স্টোর জানান, ১০টি উত্তর ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।

এই প্রেক্ষাপটে, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আবারও ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে রাজি হয়েছে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *