রাশিয়ার বিজয় দিবস: চীন ও ব্রাজিলের নেতাদের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক
আগামী ৯ই মে, শুক্রবার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এরই মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আমন্ত্রণ জানিয়েছেন চীন ও ব্রাজিলের শীর্ষ নেতাদের।
খবর সূত্রে জানা যায়, এই আয়োজন রাশিয়ার ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের একটি প্রয়াস হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
রাশিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর উপস্থিতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পুতিন এই সফরকে ‘প্রধান অতিথি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তাঁদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, শি জিনপিং-এর এই চার দিনের সফরে বাণিজ্য, রাশিয়া থেকে চীনকে তেল ও গ্যাস সরবরাহ এবং ব্রিকস-এর (BRICS) মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, ব্রিকস-এর সদস্য হিসেবে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নাম রয়েছে, তবে বর্তমানে এর পরিধি আরও বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক যখন তলানিতে এসে ঠেকেছে, তখন এই ধরনের আয়োজন রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর মাধ্যমে রাশিয়া বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে, তাদের পাশে এখনো অনেক মিত্র দেশ রয়েছে। বিশ্লেষকরা আরও মনে করেন, এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের নেতাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, ক্রেমলিন শুধুমাত্র কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো নয়, বরং ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বেও তাদের শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে।
তবে, এই উৎসবের আবহে কিছুটা হলেও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে। মস্কোর চারটি বিমানবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় অনেক ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে এবং এতে করে বহু যাত্রী আটকা পড়েছেন।
এছাড়াও, উৎসবের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা সীমিত করা হয়েছে, যা ব্যাংক ও ট্যাক্সি পরিষেবা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এরই মধ্যে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো এবং সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুসিক-সহ বিভিন্ন দেশের নেতারা মস্কোতে পৌঁছেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চাপ সত্ত্বেও স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
এর বাইরে কিউবা, ভিয়েতনাম, ভেনেজুয়েলা ও বুরকিনা ফাসোর নেতারাও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
অতীতে, যখন রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ক ভালো ছিল, তখন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজর এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্রিতিয়েনের মতো নেতারাও যোগ দিয়েছিলেন।
তবে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রাশিয়া কর্তৃক নিজের অংশ করে নেওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে, এবং পরবর্তীতে ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তোলে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, এই উৎসবের অতিথি তালিকা বিজয় দিবসের গুরুত্বের প্রতিচ্ছবি। তিনি বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে যে রাশিয়ার শুধু মিত্রই নেই, বরং এমন অনেক দেশ রয়েছে যারা আমাদের আদর্শ ও বিশ্বদৃষ্টির কাছাকাছি।’
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস