ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ৪৭ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার রাতের এই হামলায় আবাসিক ভবন, বেসামরিক অবকাঠামো এবং গাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মিত্র দেশগুলোর প্রতি আরও জোরালো সমর্থন জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার প্রকাশিত খবরে জানা যায়, খারকিভ শহরের মেয়র ইহোর তেরেকভ জানিয়েছেন, ড্রোনগুলো শহরের ১২টি স্থানে আঘাত হেনেছে।
খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ সিনেহুবভ জানান, হামলায় আবাসিক ভবন, বেসামরিক অবকাঠামো এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খারকিভের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, রুশ বাহিনী থার্মোবারিক ওয়ারহেডযুক্ত ড্রোন ব্যবহার করেছে।
তাদের টেলিগ্রাম বার্তায় বলা হয়, থার্মোবারিক অস্ত্র শক্তিশালী বিস্ফোরণ তরঙ্গ এবং উত্তপ্ত ধোঁয়ার মেঘ তৈরি করে, যা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়। প্রসিকিউটর জানান, এর ব্যবহার আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “বিশ্ব যখন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত, তখন ইউক্রেনে প্রায় প্রতি রাতেই দুঃস্বপ্ন নেমে আসে, যা জীবন কেড়ে নেয়।
ইউক্রেনের শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন। আমাদের অংশীদার—যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং শান্তিপ্রিয় সকল দেশের কাছ থেকে দৃঢ় এবং বাস্তব সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া শুক্রবার রাতে মোট ১৮৩টি বিস্ফোরক ড্রোন ও ডেকয় (ভুল সংকেত প্রেরণকারী) নিক্ষেপ করেছে।
এর মধ্যে ৭৭টি ড্রোনকে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং আরও ৭৩টি সম্ভবত ইলেক্ট্রনিক জ্যামিংয়ের কারণে ধ্বংস হয়েছে।
রাশিয়া দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছুঁড়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাতে ১৭০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, আটটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং তিনটি গাইড ক্ষেপণাস্ত্রও তারা প্রতিহত করেছে।
এদিকে, রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে কৃষ্ণ সাগর বন্দর শহর নভরোসিয়স্কে ড্রোন হামলায় শিশুসহ পাঁচজন আহত হয়েছে বলে মেয়র আন্দ্রে ক্রাভচেঙ্কো জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক এই হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যার ফলে ইউক্রেনের বিশাল খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার মিলবে।
এই চুক্তিটি কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে, যা রাশিয়ার সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যে কিয়েভে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করতে পারে।
শুক্রবার কিয়েভে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ইউক্রেন প্রস্তুত।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি যেকোনো তারিখ থেকে শুরু হয়ে পুরো এক মাস পর্যন্ত চলতে পারে, যা যুদ্ধ বন্ধের জন্য অর্থবহ পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ দেবে।
“আসুন, সত্যি কথা বলি—তিন, পাঁচ বা সাত দিনে কোনো গুরুতর বিষয়ে রাজি হওয়া যায় না,” তিনি যোগ করেন।
জেলেনস্কি আরও বলেন, আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার বিষয়টি নিছক একটি কৌশল।
এর মাধ্যমে রাশিয়ার বার্ষিক উদযাপনের আগে “লাল স্কয়ারে” আসা অতিথিদের জন্য একটি “নরম পরিবেশ” তৈরি করতে চাইছে রাশিয়া।
জেলেনস্কির মতে, এটি “অগভীর” একটি পদক্ষেপ।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পুনর্ব্যক্ত করেন যে কিয়েভের সামরিক পদক্ষেপগুলো হবে “প্রতিফলনমূলক”, অর্থাৎ তারা রাশিয়ার পদক্ষেপের জবাব দেবে।
তিনি স্বীকার করেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দৃঢ় নজরদারি ছাড়া যুদ্ধফ্রন্টে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব, তবে ৩০ দিনের এই বিরতি একটি বিশ্বাসযোগ্য সূচনা দিতে পারে।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উপদেষ্টাদের একটি বৈঠকের আয়োজন করার চেষ্টা চলছে এবং ওয়াশিংটনে সম্প্রতি হওয়া কিছু পরিবর্তন সত্ত্বেও এই ধরনের আলোচনা হওয়াকে তিনি একটি “ইতিবাচক লক্ষণ” হিসেবে দেখছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস