যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে পাঠানো মানবিক ও সামরিক সহায়তার ওপর নজর রাখছে রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (National Security Agency – NSA) জানিয়েছে, রুশ সামরিক গোয়েন্দাদের সঙ্গে যুক্ত হ্যাকাররা এই কাজটি করছে।
তারা মূলত ইউক্রেনে পাঠানো ত্রাণ ও সামরিক সরঞ্জামের তথ্য হাতিয়ে নিতে চাইছে।
এনএসএ’র রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ার হ্যাকাররা পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন প্রযুক্তি ও সরবরাহকারী সংস্থার ওপর সাইবার হামলা চালিয়েছে। এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিরক্ষা, পরিবহন ও সরবরাহকারী সংস্থাগুলো রয়েছে।
হ্যাকাররা ইউক্রেন সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত ইন্টারনেট-সংযুক্ত ক্যামেরাগুলোর অ্যাক্সেসও নেওয়ার চেষ্টা করেছে, যার মাধ্যমে তারা সাহায্য সামগ্রীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছিল। পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং অন্যান্য পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের কিছু দেশেও এই ধরনের ক্যামেরা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
সাইবার হামলার শিকার হওয়া সংস্থাগুলোর মধ্যে বন্দর, বিমানবন্দর এবং রেলওয়ে সিস্টেমও অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদিও, ঠিক কী ধরনের সাহায্য সামগ্রীর ওপর রাশিয়া নজর রাখছিল, তা রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়নি, তবে ইউক্রেন যুদ্ধে দেশটির মিত্র দেশগুলো বিপুল পরিমাণ সামরিক ও মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে।
এই হ্যাকিংয়ের পেছনে ‘ফ্যান্সি বিয়ার’ নামে পরিচিত একটি রুশ সামরিক গোয়েন্দা ইউনিটের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতীতেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে সাইবার হামলার সঙ্গে এই গোষ্ঠীর যোগ পাওয়া গেছে।
হ্যাকাররা মূলত ‘স্পিয়ারফিশিং’-এর মতো কৌশল ব্যবহার করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর মাধ্যমে ভুয়া ইমেইল পাঠিয়ে সংবেদনশীল তথ্য বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার ইন্সটল করার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া, ছোট অফিস এবং ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের দুর্বলতাগুলোও তারা কাজে লাগিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাকাররা খুব অত্যাধুনিক কৌশল ব্যবহার না করলেও, তাদের এই সুসংগঠিত প্রচেষ্টা ইউক্রেনে পাঠানো সাহায্যের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজাতে পারে অথবা সরবরাহ ব্যবস্থায় আরও বড় ধরনের সাইবার অথবা ভৌত হামলা চালাতে পারে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এরই মধ্যে তাদের প্রতিরক্ষা সংস্থা ও সরবরাহকারীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ, গত বছর ইউরোপে কয়েকটি নাশকতামূলক ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে, যারা ইউক্রেনে সাহায্য পাঠাচ্ছে, তাদের জন্য সতর্ক থাকাটা খুবই জরুরি। কারণ, সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্য ও বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস