যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণরত ইউক্রেনীয় সেনাদের উপর নজরদারি, ব্রিটিশ আদালতে রুশ গুপ্তচর প্রধানের কারাদণ্ড!

**ব্রিটিশ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে রাশিয়ান নেটওয়ার্কের হোতা গ্রেপ্তার, যুক্তরাজ্যের আদালতে কারাদণ্ড**

যুক্তরাজ্যে সক্রিয় একটি রুশ গুপ্তচর চক্রের প্রধানকে প্রায় ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে লন্ডনের একটি আদালত। সোমবারের এই রায়ে অভিযুক্ত অন্যান্য সদস্যদেরও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যার সম্মিলিত মেয়াদ প্রায় ৪০ বছর। খবরটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা বৃত্তির জগতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এই গুপ্তচর চক্রের মূল হোতা ছিলেন ৪৭ বছর বয়সী অর্লিন রুসেভ। রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাকে এই কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রুসেভের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাশিয়ার হয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালাতেন। তদন্তে জানা যায়, রুসেভের সাথে কুখ্যাত ‘ওয়্যারকার্ড’ কেলেঙ্কারির মূলহোতা ইয়ান মারসালেকের মধ্যে হাজার হাজার বার্তা আদান-প্রদান হয়েছে, যিনি মূলত বুলগেরীয় নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত এই চক্রটি পরিচালনা করতেন।

বিচারক নিকোলাস হিলিয়ার্ড রুসেভকে সাজা ঘোষণার সময় বলেন, রুসেভের কার্যকলাপ ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি স্বরূপ ছিল। এই চক্রের সদস্যরা সাংবাদিক, ভিন্নমতাবলম্বী এবং জার্মানির একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণরত ইউক্রেনীয় সেনাদের ওপর নজরদারি চালাত।

আদালতের তথ্য অনুযায়ী, এই চক্র সরাসরি রুশ গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করত না, বরং তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থ উপার্জন। তবে তাদের কর্মকাণ্ড ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বিস্তৃত। ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী রুশ ডাবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপালের ওপর বিষ প্রয়োগের ঘটনার পরিকল্পনাতেও তাদের যোগসূত্র ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রুসেভের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত ছিলেন বিজার জাম্বাজভ (৪৪), যিনি ১০ বছর ২ মাসের কারাদণ্ড পেয়েছেন। তাঁর প্রাক্তন সহযোগী কাটরিন ইভানোভা (৩৩) ৯ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। এছাড়া, ভ্যানিয়া গাবেরোভা (৩০) আট বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন, যদিও তিনি ইতিমধ্যে এক বছর তিন মাস কারাগারে ছিলেন। টিহমির ইভানচেভ (৩৯) এবং ইভান স্তোয়ানভকে (৩৩) যথাক্রমে আট বছর এবং ৬ বছর ৪ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই চক্রটি ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত স্টুটগার্টের কাছে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে মোবাইল ফোনের সংকেত আটকের পরিকল্পনা করেছিল। এছাড়া, তারা রাশিয়াকে ড্রোন এবং ক্যামেরুনে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করত। অভিযুক্তরা প্রায়ই রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল।

যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক বর্তমানে শীতল যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ব্রিটেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপে ‘বিশৃঙ্খলা’ তৈরির চেষ্টা করার অভিযোগ এনেছে। রুশ দূতাবাস এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে রাশিয়া বরাবরই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *