নৈতিক আকাঙ্ক্ষা: নিপীড়ন রুখতে প্রয়োজন সক্রিয়তা ও বাস্তব পদক্ষেপ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি ছবি আজও আমাদের নাড়া দেয়। নাৎসি জার্মানির একটি শিপইয়ার্ডে শ্রমিকদের সারিবদ্ধভাবে হিটলারকে স্যালুট করার দৃশ্য—কিন্তু তাদের মধ্যে একজন, বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, দুই হাত ভাঁজ করে, চোখেমুখে দৃঢ়তা।
ডাচ ইতিহাসবিদ রুটগার ব্রেগম্যান এই ছবিটির কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন, কী এমন ছিল যা সেই মানুষকে এত ভীতির মধ্যেও অবিচল রেখেছিল?
ব্রেগম্যানের মতে, এর উত্তর লুকিয়ে আছে ‘নৈতিক আকাঙ্ক্ষা’-র মধ্যে।
ব্রেগম্যান মনে করেন, সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে প্রয়োজন আদর্শবাদের সঙ্গে বাস্তবতার মিশেল।
তার নতুন বই ‘নৈতিক আকাঙ্ক্ষা: আপনার প্রতিভা নষ্ট করা বন্ধ করুন এবং পরিবর্তন আনুন’ (Moral Ambition: Stop Wasting Your Talent and Start Making a Difference)-এ তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে সমাজের নানা স্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে।
ব্রেগম্যানের মতে, শুধুমাত্র সচেতনতা তৈরি করাটাই যথেষ্ট নয়।
তিনি বলেন, “সচেতনতা দিয়ে তো আর ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া যায় না, বাসস্থানও তৈরি করা যায় না।”
তার মতে, যারা পরিবর্তনের জন্য কাজ করেন, তাদের মধ্যে অনেকেই শুধু আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন, কিন্তু বাস্তব পদক্ষেপ নিতে চান না।
ব্রেগম্যানের মতে, এই ধরনের মানসিকতা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন কর্মোদ্যোগ।
তিনি ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একত্রিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
ব্রেগম্যান মনে করেন, যারা সুবিধাভোগী, তাদেরও সমাজের প্রতি কিছু দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদের এগিয়ে আসা উচিত।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে, যা ব্রেগম্যানের উদ্বেগের কারণ।
প্রযুক্তির উন্নয়ন, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই-এর কারণে অনেক মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ব্রেগম্যান মনে করেন, সমাজের এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কর্মসংস্থান এবং মানুষের মূল্যায়নের ধারণা নতুন করে সাজানো দরকার।
ব্রেগম্যানের মতে, পরিবর্তন আনা সহজ নয়।
এর জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায় এবং সকলের সহযোগিতা।
তিনি মনে করেন, অনলাইনে একে অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি না করে, বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও কৌশল তৈরি করতে হবে।
তিনি বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তারা সমাজের পরিবর্তনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
ব্রেগম্যানের মা একজন সমাজকর্মী এবং তার বাবা ছিলেন যাজক।
তাদের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রেগম্যান বলেন, আদর্শের প্রতি অবিচল থাকতে হবে এবং নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন