মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণহত্যার আসামি, ‘আমি শেষ!’, গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তি!

নিউ ইয়র্কের এক ব্যক্তিকে রুয়ান্ডার গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ গোপন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জনের চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (গতকাল) ফেডারেল এজেন্টরা তাকে গ্রেপ্তার করার পর তিনি নাকি বলেছিলেন, “আমি জানি আমার সবকিছু শেষ।”

৬৫ বছর বয়সী ফাউস্টিন নসবামুকুঞ্জিকে ভিসা জালিয়াতি এবং নাগরিকত্ব জালিয়াতির চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রসিকিউটরদের মতে, ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যার সময় তিনি স্থানীয় নেতা হিসেবে তার ভূমিকা গোপন করেছিলেন। জানা যায় রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় প্রায় ৮ লক্ষাধিক তুৎসি সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা মাত্র তিন মাসের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।

অভিযোগনামা অনুযায়ী, নসবামুকুঞ্জি রুয়ান্ডার একটি আদালতে তার অনুপস্থিতিতে গণহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি তার এলাকার তুৎসিদের হত্যার তত্ত্বাবধানের জন্য তার নেতৃত্ব পদ ব্যবহার করার অভিযোগের শিকার হয়েছিলেন। গণহত্যার সময় তিনি নাকি চেকপোস্ট তৈরি করে তুৎসিদের আটক ও হত্যার ব্যবস্থা করেছিলেন।

আদালতে প্রথম শুনানিতে নসবামুকুঞ্জি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং ২ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জামিনের শর্ত হিসেবে তাকে গৃহবন্দী থাকতে হবে এবং জিপিএস মনিটরিংয়ের অধীনে থাকতে হবে। তবে তিনি একজন মালী হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। তার আইনজীবী ইভান সুগার তাকে একজন “আইন-মান্যকারী মৌমাছি পালনকারী এবং মালী” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি “রুয়ান্ডার গণহত্যার শিকার” এবং “সহস্রাধিক আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুকে” হারিয়েছেন।

প্রসিকিউটরদের মতে, নসবামুকুঞ্জি গণহত্যার শুরুতে জনসাধারণের সভায় তুৎসিদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে তাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। কিন্তু গোপনে তিনি হুতু সম্প্রদায়কে তুৎসিদের হত্যা করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। এমনকি তিনি হুতু পুরুষদের তুৎসি নারীদের ধর্ষণ করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নসবামুকুঞ্জি ২০০৩ সালে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার আবেদন করেন এবং ২০০৭ সালে গ্রিন কার্ড পান। এরপর ২০০৯ ও ২০১৫ সালে তিনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। প্রসিকিউটরদের মতে, আবেদনে তিনি মিথ্যাভাবে উল্লেখ করেছেন যে গণহত্যার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।

বিচার বিভাগের ক্রিমিনাল বিভাগের প্রধান ম্যাথিউ আর গ্যালেত্তি বলেছেন, নসবামুকুঞ্জি “বিদেশ বিভুঁইয়ে নৃশংস সহিংসতায় অংশ নিয়েছিলেন এবং পরে গ্রিন কার্ড ও মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জনের জন্য মিথ্যা বলেছেন।” ব্রুকলিনের মার্কিন অ্যাটর্নি জন জে ডারহাম বলেছেন, “দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে, তিনি এইসব মিথ্যাচার করে পার পেয়েছেন এবং একটি অন্যায়ভাবে অর্জিত ‘পরিষ্কার’ জীবন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *