রাইডার কাপ গল্ফ টুর্নামেন্ট: যেখানে গল্ফ আর ফুটবল উন্মাদনা মিলেমিশে একাকার।
খেলাধুলার জগতে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যা কেবল খেলোয়াড়দের দক্ষতা বা কৌশলের ঊর্ধ্বে গিয়ে দর্শকদের আবেগকে নাড়া দেয়। রাইডার কাপ গল্ফ টুর্নামেন্ট তেমনই একটি দৃষ্টান্ত।
প্রতি দু’বছর অন্তর অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক দলগত গল্ফ প্রতিযোগিতায় ইউরোপ এবং আমেরিকার সেরা গল্ফাররা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ে। তবে এই টুর্নামেন্টের আকর্ষণ কেবল খেলোয়াড়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দর্শকদের উন্মাদনা, যা একে অন্য সাধারণ গল্ফ টুর্নামেন্ট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তোলে।
সাধারণত গল্ফ খেলার সময় পিন-ড্রপ নীরবতা বজায় রাখার নিয়ম থাকে। কিন্তু রাইডার কাপে চিত্রটা ভিন্ন। এখানে গ্যালারির শব্দ এতটাই বেশি থাকে যে, অনেক সময় খেলোয়াড়দের “শুরু করুন” বলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
যেন এটি কোনো প্রিমিয়ার লিগের ডার্বি ম্যাচের মতোই উত্তেজনাপূর্ণ। খেলা শুরুর আগে বাজি-নাচন থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের নামে গান—সব কিছুই এখানে দর্শকদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
ইউরোপীয় সমর্থকরা এই ক্ষেত্রে একটু বেশিই এগিয়ে। তারা তাদের খেলোয়াড় এবং দলের জন্য তৈরি করে বিশেষ গান, যা অনেকটা ফুটবল ম্যাচের অনুকরণে করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, “ইউরোপের আগুন, আমেরিকা ভীত” গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আবার, আয়ারল্যান্ডের তারকা গল্ফার ররি ম্যাকইলরয়ের জন্য “সে তোমাদের মনে, ররি” গানটি তৈরি করা হয়েছিল, যা একটি জনপ্রিয় গানের সুরের সঙ্গে মিল রেখে গাওয়া হয়।
অন্যদিকে, আমেরিকান সমর্থকরা সাধারণত “ইউ-এস-এ!” ধ্বনি দিয়ে তাদের সমর্থন জানায়। এই চিৎকারে তারা প্রতিপক্ষের উপর মানসিক চাপ তৈরি করতে চায়।
খেলোয়াড় থেকে শুরু করে দলের ক্যাপ্টেন—সবার কাছেই এই সমর্থনের গুরুত্ব অনেক। তারা মনে করেন, দর্শকদের এই সমর্থন তাদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগায়।
এই পরিবেশে খেলাটা খেলোয়াড়দের জন্য অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা। খেলোয়াড়রা যেন ফুটবল খেলার মতোই সমর্থকদের কাছ থেকে সমর্থন পায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-এর ভক্ত ররি ম্যাকইলরয়ও একই মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ছোটবেলায় আমি ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে খেলার স্বপ্ন দেখতাম এবং আমার নামে গান গাওয়া হবে—এটা কল্পনা করতাম।
গল্ফ কোর্সে যে এমনটা হবে, তা ভাবিনি। সমর্থকরা খুব সৃষ্টিশীল, এটা সত্যিই দারুণ।”
২০১৮ সালের রাইডার কাপে ইউরোপীয় দলের সাফল্যের পর আমেরিকান খেলোয়াড় জাস্টিন থমাসও দর্শকদের এই উদ্দীপনার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেছিলেন, “ইউরোপীয়রা কীভাবে এটা করে, আমি জানি না। তাদের কি ১০,০০০ জনের একটা দল আছে, যারা এসব তৈরি করে? তবে তারা অসাধারণ।”
খেলায় দর্শকদের এই সমর্থন যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা খেলোয়াড়দের কথাতেই স্পষ্ট। আমেরিকান খেলোয়াড় জেন্ডার শ্যাফেল মনে করেন, “এই টুর্নামেন্টের আসল স্বাদ যোগ করে সমর্থকরাই।
ইউরোপের পাব-এর গান হোক বা আমেরিকার ‘ইউএসএ’ শ্লোগান, আমি সবকিছুই ভালোবাসি।
রাইডার কাপে একদিকে যেমন গান-বাজনা চলে, তেমনই চলে হাসি-ঠাট্টা। ইউরোপীয় সমর্থকরা প্রায়ই আমেরিকানদের “তোমাদের তো একটাই গান” বলে উত্যক্ত করে।
এই ধরনের খুনসুটিপূর্ণ পরিবেশ খেলার উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
ফুটবল খেলার মতই, রাইডার কাপের গানগুলোও দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। অনেক সময়, একটি বিশেষ খেলোয়াড়কে উৎসর্গ করে গান তৈরি করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ইতালীয় খেলোয়াড় ফ্রান্সেসকো ও এদুয়ার্দো মলিনারির জন্য “মলিনারি দুজন” গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
প্রতিপক্ষের মাঠে খেলা হলে ইউরোপীয় সমর্থকদের গান একটু কম শোনা যায়, তবে তাদের উৎসাহে কোনো কমতি থাকে না। আসন্ন টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে উভয় দলই।
একদিকে যেমন আমেরিকান খেলোয়াড়রা তাদের সমর্থকদের কাছ থেকে উজ্জীবিত হতে চাইছে, তেমনই ইউরোপীয় দলও তাদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
সবমিলিয়ে, রাইডার কাপ গল্ফ টুর্নামেন্ট শুধু একটি খেলা নয়, বরং এটি খেলোয়াড়, দর্শক এবং সংস্কৃতির এক অসাধারণ মিলনমেলা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন