যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামের সাগরে জীবন বাঁচানোর এক সাহসী গল্প।
আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগে, ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে, ভিয়েতনামের রাজধানী সাইগনের পতন হয়। এই ঘটনার স্মৃতি আজও বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
সেই সময়, যখন মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা দক্ষিণ চীন সাগরে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম ফেলে দিচ্ছিলেন, তখন কয়েকজন সাহসী মানুষের মানবিকতা এক ভিন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
মার্কিন নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ল্যারি চেম্বারস-এর কথা ধরা যাক। তিনি জানতেন, ইউএসএস মিডওয়ে জাহাজের ডেক থেকে হেলিকপ্টার সরানোর নির্দেশ দিলে তার সামরিক জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে।
কিন্তু একজন ভিয়েতনামী বিমান বাহিনীর মেজর বুয়াং-লি তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে একটি ছোট বিমানে করে ঐ জাহাজে অবতরণ করতে চাচ্ছিলেন।
বুয়াং-লি-র পরিবার যদি কমিউনিস্টদের হাতে পড়ত, তবে তাদের ভয়ংকর পরিণতি হতে পারতো। তাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ক্যাপ্টেন চেম্বারস দ্রুত পরিস্থিতি বুঝতে পারেন। তিনি ঝুঁকি নিয়ে ওই বিমানের অবতরণের জন্য মিডওয়ের ডেক পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন।
এর ফলস্বরূপ, মূল্যবান হেলিকপ্টারগুলো সমুদ্রের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। চেম্বারস পরে বলেছিলেন, “আমি জানতাম, এই সিদ্ধান্তের জন্য আমার সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু আমি অন্তত বলতে পারতাম, আমি কতগুলো হেলিকপ্টার ফেলেছি, তা আমি দেখিনি।”
এরপর বুয়াং-লি নিরাপদে মিডওয়েতে অবতরণ করেন। ক্রুরা কোনোমতে বিমানটিকে ধরে রাখেন, যাতে শক্তিশালী বাতাসে সেটি উড়ে না যায়।
এই ঘটনার মাধ্যমে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়, যেখানে জীবনের মূল্য ছিল সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
একই সময়ে, হেলিকপ্টার পাইলট মেজর জেরি বেরি সাইগন থেকে মার্কিন নাগরিক এবং কিছু ভিয়েতনামীকে সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তিনি ঝুঁকি নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের ছাদে অবতরণ করেন এবং সেখানকার লোকজনকে সরিয়ে নিতে সহায়তা করেন। এমনকি তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও নিরাপদে সরিয়ে নেন।
এই দুই অফিসারের সাহসী পদক্ষেপ প্রমাণ করে, যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যেও মানবিক মূল্যবোধ কিভাবে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
সাইগনের পতনের এই ঘটনা শুধু একটি সামরিক পরাজয় ছিল না, বরং এটি ছিল জীবন রক্ষার এক কঠিন সংগ্রাম।
ভিয়েতনামের এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়, সংকটকালে মিত্রদের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত।
ক্যাপ্টেন চেম্বারস এবং মেজর বেরির মতো মানুষেরা দেখিয়ে গেছেন, জীবনের মূল্য সব সময়ই সবচেয়ে বেশি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।