যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন সেনাদের আত্মহত্যার পর তাদের পরিবারের ভাতার জটিলতা
যুদ্ধফেরত সেনাদের আত্মহত্যার পর তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে জটিলতা সৃষ্টি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির সামরিক বিষয়ক দপ্তর (Department of Veterans Affairs – VA) পরিবারগুলোকে ভাতা দিতে নানা ধরণের প্রমাণ চায়, যা অনেক ক্ষেত্রে পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি, সিএনএন-এর এক অনুসন্ধানে এই বিষয়ক কিছু তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে সেনাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা ছিলো, যা তারা পেশাগতভাবে প্রকাশ করেননি।
ফলে, মৃত্যুর পর তাদের পরিবারকে ভাতা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ দিতে বেগ পেতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে কাজ করা অনেক সদস্যই যুদ্ধকালীন মানসিক আঘাত বা ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ (PTSD) অথবা ‘ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি’ (TBI)-এর শিকার হন।
কিন্তু অনেকে সাহায্য চাইতে চান না, কারণ তাঁদের মধ্যে এমন ধারণা কাজ করে যে অন্য সহকর্মীদের তুলনায় তাঁরা ভালো আছেন অথবা সাহায্য চাওয়ার মধ্যে দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এই কারণে অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর তাঁদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ভাতা পাওয়ার জন্য পরিবারগুলোকে প্রমাণ করতে হয় যে, মৃতের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি তাঁর সামরিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে, এই প্রমাণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
সিএনএন-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, এমনও অনেক পরিবার রয়েছে যাদের স্বজন সামরিক বাহিনীতে কাজ করার সময় PTSD-তে আক্রান্ত ছিলেন, কিন্তু তাঁদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন সেনা সদস্যের স্ত্রী লিন্ডা গোল্ডিংয়ের কথা বলা যায়। তাঁর স্বামী ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং যুদ্ধের ৪০ বছর পর তিনি আত্মহত্যা করেন।
লিন্ডার মতে, তাঁর স্বামীর আত্মহত্যার মূল কারণ ছিল যুদ্ধের স্মৃতি এবং PTSD। কিন্তু সামরিক দপ্তর এই যুক্তিতে রাজি হয়নি। কারণ, তাঁর স্বামী মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সাহায্য নেননি এবং PTSD-এর আনুষ্ঠানিক কোনো নির্ণয়ও ছিল না। এই কারণে লিন্ডাকে প্রায় এক দশক ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক দপ্তর বর্তমানে প্রতি বছর আত্মহত্যা প্রতিরোধে কয়েক’শ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। কিন্তু সিএনএন-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একই সময়ে অনেক পরিবারকে তাঁদের প্রাপ্য ভাতা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী, একজন সেনা সদস্যের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যরা শিক্ষা সহায়তা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ এবং মাসিক ভাতা পাওয়ার যোগ্য। এই ভাতার পরিমাণ মাসে ১,৬০০ থেকে ৩,৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার থেকে ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার বাংলাদেশি টাকা)।
তবে, এই সুবিধা পেতে হলে প্রমাণ করতে হয় যে, মৃতের মৃত্যু তাঁর সামরিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
সিএনএন-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় ৫০০ পরিবারের আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
সামরিক দপ্তর এই বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান রাখে না, তবে ধারণা করা হয় যে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এই ঘটনার শিকার হওয়া অন্য নারীদের মতো এমিলি ইভান্সও মনে করেন তাঁর স্বামীর আত্মহত্যা সরাসরি তাঁর সামরিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
তাঁর স্বামী ইরাক যুদ্ধে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সেনাবাহিনী থেকে ফেরার পর PTSD ও TBI-তে আক্রান্ত হন। কিন্তু সামরিক দপ্তর তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। কারণ হিসেবে জানানো হয়, তাঁদের দাম্পত্য কলহ ছিল এবং মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি আত্মহত্যার কথা ভাবছেন না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য সামরিক দপ্তরকে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে এবং আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। এছাড়া, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সেনাদের উৎসাহিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কম হয়।
তথ্য সূত্র: CNN