৪০০ বছর পরেও! কফিনে শায়িত সাধ্বীর মুখ দেখতে মানুষের ভিড়

স্পেনের একটি ছোট্ট শহর আলবা দে টর্মেসে কয়েক সপ্তাহ ধরে মানুষের ঢল নেমেছিল। কারণ একটাই – ষোড়শ শতকের ধর্মীয় সংস্কারক এবং ক্যাথলিক সাধিকা সেন্ট টেরেসার কফিন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়েছিল। মৃত্যুর ৪৪০ বছর পরেও, এই সাধিকার প্রতি মানুষের ভক্তি আজও অটুট, তা এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে।

আলবা দে টর্মেস, যা সবুজ প্রান্তরের মাঝে অবস্থিত, সেখানে আসা ভক্তদের মধ্যে ছিলেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সন্ন্যাসিনীরাও। মাদ্রিদ থেকে আসা গুইওমার সানচেজ তার দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি জানান, এই দৃশ্য তাকে আনন্দ ও শোক দুটোই দিয়েছে। তিনি সেন্ট টেরেসার লেখাগুলিকে সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা হিসেবে বর্ণনা করেন এবং মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও এখানে এসেছিলেন।

জানা গেছে, ১৯১৪ সালের পর এই প্রথম সেন্ট টেরেসার দেহাবশেষ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সেই সময় মাত্র একদিনের জন্য তা দেখা গিয়েছিল, তবে এবার প্রায় এক লক্ষ মানুষ সাধিকাকে এক নজর দেখার সুযোগ পেয়েছেন। কফিনের ভেতর সাধিকার মাথার খুলিটি দেখা যাচ্ছিল, যা একটি বিশেষ পোশাকে আবৃত ছিল।

শরীরের অন্যান্য অংশ, যেমন – হৃদপিণ্ড, অন্য একটি স্থানে রাখা আছে। এছাড়াও, তার কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ইউরোপের বিভিন্ন গির্জায় পবিত্র স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত আছে।

সেন্ট টেরেসা ছিলেন স্পেনের স্বর্ণযুগের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। আধ্যাত্মিকতা এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তার গভীর চিন্তা আজও মানুষের কাছে “আধ্যাত্মিকতার গভীর আলোচনা” হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেকে তাকে পূজা করেন। এমনকি, প্রাক্তন স্প্যানিশ স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোও তার হাতের একটি পবিত্র স্মারক নিজের কাছে রেখেছিলেন।

ক্যাথলিকদের কাছে সাধুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এই রীতি নতুন নয়। চার্চের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রদর্শনী তাদের সংস্কৃতির একটি অংশ। অনেক ভক্তের কাছে, সেন্ট টেরেসার এই দর্শন ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

ভারতের কিছু সন্ন্যাসিনী, যারা এই কফিনটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদের চোখে জল দেখা গিয়েছিল। ৭৫ বছর বয়সী গ্রেগোরিয়া মার্টিন লোপেজ নামক এক বৃদ্ধা, গির্জার উঁচু স্থান থেকে সাধিকার খুলি ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেন, “এই সাধু আমার কাছে এক বিরাট শক্তি। যদি তারা তাকে বন্ধ করে দেয়, তবে আমি বলতে পারব যে আমি তাকে দেখেছি।”

সেন্ট টেরেসার এই দেহাবশেষ প্রদর্শনীর মাধ্যমে, ভক্তি এবং আধ্যাত্মিকতার এক গভীর চিত্র ফুটে উঠেছে, যা আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *