শিরোনাম: কৈশোরের ছবি: স্যালি ম্যানের ক্যামেরায় ১২ বছর বয়সী মেয়েদের প্রতিচ্ছবি
কৈশোর, জীবনের এক বিশেষ সন্ধিক্ষণ। একদিকে শৈশবের সারল্য, অন্যদিকে নারীত্বের আগমনী বার্তা।
এই সময়ে মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন আসে, তা যেন এক বহমান নদীর মতো। আমেরিকান আলোকচিত্রী স্যালি ম্যান তাঁর ক্যামেরায় এই পরিবর্তনকেই ধারণ করেছেন।
তাঁর বিখ্যাত ছবি তোলার বই, “অ্যাট টুয়েলভ: পোট্রেট অফ ইয়ং ওমেন” -এ (At Twelve: Portraits of Young Women) ১২ বছর বয়সী মেয়েদের ছবি রয়েছে, যা এই বয়সের মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়।
বইটিতে মূলত আমেরিকার গ্রামীণ অঞ্চলের মেয়েদের ছবি রয়েছে। তাদের জীবনযাত্রা, হাসি-কান্না, স্বপ্ন, দ্বিধা—সবকিছুই যেন ক্যামেরার লেন্সে বন্দী।
ছবিগুলোর মাধ্যমে স্যালি ম্যান তুলে ধরেছেন কৈশোরের জটিলতা, যা একইসঙ্গে আকর্ষণীয় ও উদ্বেগময়।
ছবিগুলোতে মেয়েদের চোখেমুখে ফুটে ওঠা অভিব্যক্তি গভীর অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় দেয়। তাদের চাহনিতে থাকে এক ধরনের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি, যেন তারা জগৎকে নতুন চোখে দেখছে, আবার জগৎও তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
বইটির একটি উল্লেখযোগ্য ছবিতে দেখা যায়, ওলিভিয়া নামের একটি মেয়ের প্রতিকৃতি।
ছবিতে দেখা যায়, সে একটি চেয়ারে বসে আছে, মাথায় খোঁপা বাঁধা। দৃষ্টিতে রাজ্যের ক্লান্তি।
তার পেছনে কাপড় শুকানোর জন্য টাঙানো হয়েছে, যা ছবিটিকে অন্যরকম মাত্রা দিয়েছে। ছবিটিতে দারিদ্র্য আর একাকীত্বের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে, যা অনেক দর্শকের মনে গভীর রেখাপাত করে।
ওলিভিয়া তার বাবার পরিচয় জানে না, মা হয়তো দূরে কোথাও, আর সে তার ঠাকুরমার সঙ্গে থাকে।
এই ছবিগুলো যেন আমাদের সমাজের কিছু কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে।
স্যালি ম্যান তাঁর ছবিতে মেয়েদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে কোনো রাখঢাক করেননি। তিনি তাদের জীবনের নানা দিক—তাদের দুর্বলতা, শক্তি, আনন্দ, বিষাদ—সবকিছুই তুলে ধরেছেন।
তাঁর কাজ শুধু ছবি নয়, বরং একটি দলিল, যা কৈশোরের মনস্তত্ত্বকে বুঝতে সাহায্য করে।
“অ্যাট টুয়েলভ” বইটি ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
সম্প্রতি এটি আবার নতুন করে প্রকাশিত হয়েছে, যা প্রমাণ করে এই ছবিগুলো আজও কতটা প্রাসঙ্গিক।
লেখক অ্যান বিটি বইটির ভূমিকায় লিখেছেন, “আমরা তাদের প্রতিচ্ছবি, তারা আমাদের।” অর্থাৎ, এই ছবিগুলো যেন আমাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবি, যা আমাদের কৈশোরের কথা মনে করিয়ে দেয়।
কৈশোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। স্যালি ম্যানের ছবিগুলো আমাদের সেই সময়ের জটিলতা, আনন্দ, আর অনিশ্চয়তাগুলো নতুন করে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
ছবিগুলো আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়, কিভাবে আমরা আমাদের শিশুদের আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং তাদের বিকাশে সাহায্য করতে পারি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান