মহাকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র: স্যালি রাইডের অদম্য জীবন।
১৯৮৩ সালের ১৮ই জুন, আমেরিকার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। সেদিন, স্যালি রাইড নামের এক তরুণী, নীল দিগন্তে পাড়ি দিয়ে প্রথম আমেরিকান নারী হিসেবে মহাকাশে পা রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী, শিক্ষক এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অগ্রদূত।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি তথ্য থেকে জানা যায়, রাইডের জীবনের শেষ ২৭ বছর তিনি আরেক নারীর সঙ্গে একত্রে অতিবাহিত করেছেন।
স্যালি রাইডের জন্ম হয় ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। টেনিস খেলার প্রতিভার কারণে তিনি একটি নামকরা স্কুলে আংশিক বৃত্তিও পেয়েছিলেন।
পরবর্তীতে, তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি, তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী এবং বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে ছিলেন আগ্রহী।
মহাকাশ অভিযানে যাওয়ার আগে, স্যালি রাইডকে কঠোর প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। নাসা (NASA – The National Aeronautics and Space Administration) কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে তার জন্য মহাকাশযানে কিছু পরিবর্তন এনেছিল, যেমন – সিট ছোট করা এবং মেয়েদের জন্য উপযোগী একটি টয়লেট স্থাপন করা হয়েছিল।
মহাকাশ ভ্রমণের সময়, তিনি মেকআপ ব্যবহার করেননি, যা সেসময় সংবাদ মাধ্যমে বেশ আলোচনার বিষয় ছিল।
মহাকাশে তার প্রথম যাত্রায়, স্যালি রাইড ‘এসটিএস-৭’ নামক মহাকাশ মিশনে অংশ নিয়েছিলেন। এই মিশনে তার পোশাক ছিল বিশেষ ধরনের। এমনকি, তার রূপচর্চা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তবে, তিনি সব প্রতিকূলতাকে জয় করে মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পরে, স্যালি রাইড ১৯৮৬ ও ২০০৩ সালে ‘চ্যালেঞ্জার’ ও ‘কলাম্বিয়া’ নামের দুটি মহাকাশ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি নাসার কর্মপরিবেশে পরিবর্তন আনার জন্য সোচ্চার ছিলেন এবং ভবিষ্যতের নভোচারীদের জন্য নিরাপদ মহাকাশ ভ্রমণের ওপর জোর দিয়েছিলেন।
মহাকাশ ভ্রমণের বাইরে, স্যালি রাইড বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে মনোনিবেশ করেন। তিনি কলেজ পর্যায়ে পদার্থবিজ্ঞান পড়িয়েছেন এবং ‘স্যালি রাইড সায়েন্স’ নামে একটি শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।
২০১২ সালে, অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে স্যালি রাইডের জীবনাবসান ঘটে। তার মৃত্যুর পর, তার দীর্ঘদিনের সঙ্গিনী, ট্যাম ও’শনাসির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। পরবর্তীতে, তাকে সম্মান জানাতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘আমেরিকান উইমেন কোয়ার্টার্স’ নামক মুদ্রা সিরিজে স্থান দেওয়া হয়।
এছাড়াও, ২০১৭ সালে তার সম্মানে একটি বার্বি পুতুল তৈরি করা হয়, যা নারীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
স্যালি রাইডের জীবন ছিল সংগ্রাম ও সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি শুধু একজন নভোচারী ছিলেন না, বরং বিজ্ঞান, নারী অধিকার এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের জন্য এক অনুপ্রেরণা ছিলেন। তার কাজ আজও আমাদের সমাজে আলো ছড়ায়, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারীদের এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক