নিউ ইয়র্কে লেখক সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাতের দায়ে অভিযুক্ত হাডি মাতারের সাজা ঘোষণা হতে যাচ্ছে। ২০২২ সালে নিউ ইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় লেখককে ছুরিকাঘাত করেন তিনি। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন খ্যাতিমান সাহিত্যিক সালমান রুশদি।
ফেব্রুয়ারি মাসে জুরিবোর্ডের রায়ে, ২৭ বছর বয়সী হাডি মাতারকে হত্যাচেষ্টা ও গুরুতর আঘাতের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলাকারী ইরানের সাবেক ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির জারি করা একটি ফতোয়ার (ধর্মীয় নির্দেশ) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই কাজ করেছেন। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত সালমান রুশদির বিতর্কিত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর কারণে এই ফতোয়া জারি করা হয়েছিল।
চাটাউকা কাউন্টি জেলার অ্যাটর্নি জেসন স্মিথ জানিয়েছেন, তিনি আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ২৫ বছরের কারাদণ্ডের আবেদন করবেন। এছাড়া, রুশদির সাথে মঞ্চে থাকা অপর এক ব্যক্তির আহত হওয়ার ঘটনায় মাতারের জন্য আরও সাত বছরের কারাদণ্ড চাওয়া হবে। যেহেতু একই ঘটনায় উভয় ব্যক্তি আহত হয়েছেন, তাই এই দুটি সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে।
আদালতে প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, সালমান রুশদির এই সাজা ঘোষণার সময় উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা নেই। বিচারের সময় ৭৬ বছর বয়সী রুশদি ছিলেন প্রধান সাক্ষী। তিনি সেই দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, কিভাবে মুখোশ পরা এক ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করে এবং তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন।
হামলার পর রুশদিকে পেনসিলভানিয়ার একটি হাসপাতালে ১৭ দিন এবং নিউ ইয়র্ক সিটির পুনর্বাসন কেন্দ্রে তিন সপ্তাহের বেশি সময় কাটাতে হয়েছিল। তিনি তার আত্মজীবনী ‘ knife’-এ এই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
এদিকে, হাডি মাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগেও ফেডারেল আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথম বিচারের মূল বিষয় ছিল ছুরিকাঘাতের ঘটনা, তবে দ্বিতীয় বিচারে হামলার উদ্দেশ্য আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মাতার নিউ জার্সি থেকে বাফালোর কাছে একটি গ্রীষ্মকালীন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা রুশদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে সেখানে যান। কর্তৃপক্ষের মতে, লেবানন-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহ এই ফতোয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল এবং ২০০৬ সালের এক ভাষণে তাদের প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ এর প্রতি সমর্থন জানান।
আসামীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের সহায়তা করা, হিজবুল্লাহকে সহায়তার চেষ্টা করা এবং আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতে ঘটনার ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, মাতার পেছন থেকে এসে রুশদিকে ছুরিকাঘাত করছেন। ঘটনার আকস্মিকতায় দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন