বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত সামোয়া! জরুরি অবস্থা ঘোষণা

সাওমায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, অর্থনীতির ওপর বড় ক্ষতির আশঙ্কা।

সাওমায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে দেশটির সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফিয়ামে নাওমি মাতা’আফা জানিয়েছেন, এই সংকট অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। জরুরি অবস্থার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দৈনন্দিন জীবনে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারগুলোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যে অস্থায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সাওয়ার প্রধান দ্বীপ আপোলোতে বিদ্যুতের এই সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। রাজধানী আপিয়া সহ পুরো দ্বীপজুড়ে প্রায়ই ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটছে। পর্যটন শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ প্রধান রিসোর্টগুলো বাদে আর কারো নিজস্ব জেনারেটর নেই।

হাসপাতাল, স্কুল এবং সাধারণ মানুষের জীবনও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ফিয়ামে সতর্ক করে বলেছেন, এই সংকটের কারণে চলতি বছরে দেশটির জাতীয় অর্থনীতি প্রায় ১৬ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সরকারি পরিষেবা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও এর গুরুতর প্রভাব পড়েছে।

উপোলোর দক্ষিণাঞ্চলে একটি ছোট দোকান চালান ফিলিসিতিয়া ফায়ালোগো। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে তিনিও একজন। তিনি জানান, দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে যখন বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুরু হয়, তখন তিনি প্রায় ৫০০ মার্কিন ডলার মূল্যের খাদ্যপণ্য কিনেছিলেন।

তিনি বলেন, “প্রথম দিকে বরফের কারণে জিনিসগুলো রক্ষা করা গেলেও, দ্বিতীয় দিনেই মাংসগুলো পচে যাওয়া থেকে বাঁচাতে আমাকে সেগুলো ফেলে দিতে হয়েছে।”

এই ক্ষতির কারণে তিনি মাসের শেষে কোনো লাভ করতে পারেননি। কারণ তিনি স্থানীয় বাজারে দুধ, রুটি, মাখন এবং টিনজাত খাবার বিক্রি করেন। তিনি বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক। আমার গ্রামের দোকান চালানোর জন্য এগুলো অপরিহার্য।”

সাওয়ার বাণিজ্য ও শিল্প সংস্থা (Samoa Chamber of Commerce and Industry)-এর মার্চের মাঝামাঝি সময়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ সপ্তাহে একাধিকবার এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা তাদের যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ করেছেন। অর্ধেকের বেশি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রতিটি ঘটনার ফলে তাদের ১,০০০ তালার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৫,০০০ টাকা) বেশি ক্ষতি হয়েছে।

সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাওমায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। কিন্তু এভাবে দ্বীপজুড়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকাটা খুবই বিরল।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হিসেবে জানা গেছে, আপোলো দ্বীপের ফিয়াগা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রধান জেনারেটর বিকল হয়ে যাওয়া এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূগর্ভস্থ ট্রান্সমিশন ক্যাবলে ত্রুটি দেখা দেওয়াসহ বেশ কিছু কারিগরি সমস্যা রয়েছে। পুরনো অবকাঠামো এবং যন্ত্রাংশ মেরামতের বিলম্বের কারণে পুরো আপোলো জুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

এক পর্যায়ে পুরো দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

সোমবার থেকে ৩০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে কাজ শুরু করেছে।

এপ্রিল মাসের শেষ হওয়ার আগেই আপোলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার আশা করা হচ্ছে। স্থায়ী জেনারেটর স্থাপন করা হবে আগস্ট মাসে।

সাওয়ার ব্যবসায়ী এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ তুপাইমাতুনা ফোটুওসাওয়ার মতে, বিদ্যুতের এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা সাওমার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, “ব্যবসায় এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে…বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলতে থাকলে আমাদের সম্প্রদায়ের অনেকের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জেনারেটর আমদানি করা হচ্ছে, এটা ভালো খবর। তবে শুধু জলবিদ্যুতের ওপর নির্ভর না করে, জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অন্যান্য উৎসকে উৎসাহিত করতে হবে।”

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *