ক্যালিফোর্নিয়ার এই শহরে ২০ বছর ধরে আসা-যাওয়া, সেরা অভিজ্ঞতা!

ক্যালিফোর্নিয়ার এক মনোমুগ্ধকর শহর: সান লুইস ওবিস্পো

ক্যালিফোর্নিয়ার কথা শুনলে আমাদের অনেকেরই লস অ্যাঞ্জেলেস বা সান ফ্রান্সিসকোর ছবি মনে আসে। কিন্তু এই রাজ্যের সেন্ট্রাল কোস্টেও এমন একটি সুন্দর শহর আছে যা অনেকের কাছেই অজানা।

এই শহরটির নাম সান লুইস ওবিস্পো, সংক্ষেপে এসএলও (SLO)। যারা একটু অন্যরকম, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে ঘুরতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এসএলও হতে পারে আদর্শ গন্তব্য।

এসএলও-এর ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৭৭২ সালে স্প্যানিশ মিশনারিরা এই শহরটি স্থাপন করেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত পরিবেশের কারণে এটি দ্রুত পরিচিতি লাভ করে।

বর্তমানে, এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে একদিকে রয়েছে ঐতিহাসিক আকর্ষণ, অন্যদিকে রয়েছে আধুনিক জীবনযাত্রার ছোঁয়া।

কেন সান লুইস ওবিস্পো ভ্রমণ করবেন?

এসএলও-এর প্রধান আকর্ষণগুলো হলো:

  • ছোট শহরের আকর্ষণ: এসএলও-এর জনসংখ্যা প্রায় ৫০,০০০। এখানকার স্থানীয় মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, শান্ত পরিবেশ এবং একটি “ছোট শহরের” অনুভূতি এসএলও-কে বিশেষ করে তোলে।
  • ঐতিহাসিক স্থান: এখানকার মিশন সান লুইস ওবিস্পো ডি টোলোসা (Mission San Luis Obispo de Tolosa) ক্যালিফোর্নিয়ার পুরনো মিশনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: এসএলও-এর আশেপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়, যা ট্রেকিং ও হাইকিং-এর জন্য চমৎকার। এখানকার “নাইন সিস্টার্স” নামে পরিচিত আগ্নেয়গিরির চূড়াগুলোও খুব সুন্দর।
  • খাবার ও পানীয়: এসএলও-তে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে আপনি আমেরিকান, ইতালীয়, মেক্সিকানসহ নানা ধরনের খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন। এখানকার স্থানীয় বাজারগুলোতেও বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
  • কেনাকাটা: এসএলও-তে কেনাকাটার জন্য রয়েছে নানা ধরনের দোকান, যেমন – বইয়ের দোকান, সঙ্গীতের দোকান, এবং স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকান।

কোথায় থাকবেন?

এসএলও-তে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের হোটেল ও লজ রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় হোটেল হলো:

  • ম্যাডোনা ইন (Madonna Inn): এটি সম্ভবত এসএলও-এর সবচেয়ে বিখ্যাত হোটেল। এর বিশেষত্ব হলো এর গোলাপী রঙের ডিজাইন। প্রতিটি রুমের আলাদা থিম রয়েছে।
  • হোটেল এসএলও (Hotel SLO): শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই হোটেলে আধুনিক ডিজাইন ও আরামদায়ক পরিবেশ রয়েছে।
  • পেটিট সোলেইল (Petit Soleil): ছোট ও আরামদায়ক এই হোটেলে বিনামূল্যে প্রাতরাশের ব্যবস্থা রয়েছে।
  • সান লুইস ক্রিক লজ (San Luis Creek Lodge): শান্ত ও সুন্দর পরিবেশে থাকতে চাইলে এটি একটি ভালো বিকল্প।

কি খাবেন?

এসএলও-এর কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট হলো:

  • নেটস অন মার্শ (Nate’s on Marsh): এখানে আপনি ক্লাসিক ইতালীয় খাবার উপভোগ করতে পারবেন।
  • নোভো (Novo): সুন্দর পরিবেশে বসে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার জন্য এটি একটি ভালো জায়গা।
  • গিউসেপ্পিস (Giuseppe’s): ইতালীয় খাবারের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
  • হাই স্ট্রিট মার্কেট অ্যান্ড ডেলি (High Street Market and Deli): এখানকার স্যান্ডউইচগুলো খুব বিখ্যাত।
  • ওল্ড এসএলও বারবিকিউ কোং (Old SLO BBQ Co.): বারবিকিউ প্রেমীদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
  • কোর reason কাফে (Corazón Cafe): মেক্সিকান খাবারের জন্য পরিচিত।

কি দেখবেন ও কি করবেন?

এসএলও-তে ঘোরার জন্য অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য স্থানের তালিকা দেওয়া হলো:

  • সারো সান লুইস ওবিস্পো (Cerro San Luis Obispo) বা ম্যাডোনা মাউন্টেন: এখানকার পাহাড়ে হেঁটে ওঠা একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
  • বৃহস্পতিবারের বাজার (Thursday Night Farmers Market): প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এখানে স্থানীয় বাজার বসে, যেখানে নানা ধরনের খাবার ও কেনাকাটার সুযোগ থাকে।
  • হার্স্ট ক্যাসল (Hearst Castle): এসএলও থেকে প্রায় ৪৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত এই প্রাসাদটি ঘুরে আসা যেতে পারে।
  • তিমি দেখা (Whale watching): কাছাকাছি সমুদ্র সৈকত থেকে তিমি দেখার সুযোগ রয়েছে।

কিভাবে যাবেন?

  • বিমানপথে: এসএলও কাউন্টি এয়ারপোর্ট (SBP)-এ সরাসরি বিমান যোগে যাওয়া যায়।
  • সড়কপথে: লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্রায় ১৯২ মাইল এবং সান ফ্রান্সিসকো থেকে প্রায় ২৩১ মাইল দূরে এসএলও অবস্থিত।
  • ট্রেনে: “এ্যামট্র্যাক প্যাসিফিক সার্ফলাইনার” ট্রেনে ভ্রমণও একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা হতে পারে।

ঘোরাঘুরির ব্যবস্থা

এসএলও-তে ঘোরাঘুরির জন্য আপনি হেঁটে, বাইকে অথবা পাবলিক বাসে যেতে পারেন। এছাড়া, এখানে উবার ও লিফটের মতো ট্যাক্সি পরিষেবাও পাওয়া যায়।

বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য কিছু জরুরি তথ্য

  • ভিসা: সান লুইস ওবিস্পো ভ্রমণে যেতে হলে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার প্রয়োজন হবে। ভিসা আবেদন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য ঢাকার মার্কিন দূতাবাস অথবা কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • আবহাওয়া: এসএলও-এর আবহাওয়া সাধারণত বেশ মনোরম থাকে, তবে ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নেওয়া ভালো।
  • খরচ: ভ্রমণের খরচ আপনার রুচি ও চাহিদার উপর নির্ভর করে।
  • ভাষা: এখানকার স্থানীয় ভাষা ইংরেজি।
  • অন্যান্য: ভ্রমণের সময় আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন – টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, ঔষধপত্র, ইত্যাদি সঙ্গে নিন।

সবুজ পাহাড় আর শান্ত পরিবেশের এই শহরটি হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণের জন্য একটি চমৎকার গন্তব্য।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *