ঐতিহাসিক! প্রথম নারী ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ!

ঐতিহাসিক এক ঘটনা, সারা বিশ্বের ৮ কোটি ৫০ লক্ষ খ্রিস্টানের প্রধান হিসেবে ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ পদে প্রথম একজন নারী।

যুক্তরাজ্যের চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান হিসেবে সারা মুলারির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই পদে তিনিই প্রথম নারী। ৬৩ বছর বয়সী সারা মুলারির এই নিয়োগ শুধু একটি ব্যক্তির ক্ষমতায়ন নয়, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা বিশ্বে নারী নেতৃত্ব এবং ধর্মীয় কাঠামোতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।

আর্চবিশপ পদে আসার আগে সারা মুলারি লন্ডনের বিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এর আগে ইংল্যান্ডের প্রধান নার্সিং অফিসার এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (NHS) রোগী বিষয়ক পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। স্বাস্থ্যখাতে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে।

সারা মুলারির এই পদে আসীন হওয়াটা সহজ হয়েছে মূলত কয়েক বছর আগে নারী বিশপ নিয়োগের সিদ্ধান্তের কারণে, যা তৎকালীন আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি’র নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছিল। এর আগে, নারীদের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার কোনো সুযোগ ছিল না।

আর্চবিশপ পদে জাস্টিন ওয়েলবি’র উত্তরসূরি নির্বাচনের কারণও ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তার আগের আর্চবিশপ, জন স্মিথ নামক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত না করার কারণে ওয়েলবি’কে পদত্যাগ করতে হয়।

ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ পদটি শুধু একটি ধর্মীয় পদ নয়, বরং এটি যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। আর্চবিশপ প্রায়ই বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এবং রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলোতেও তার সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে। সম্প্রতি রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

আর্চবিশপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া বেশ সুসংগঠিত। প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটি করে ক্রাউন নমিনেশন কমিশন। এই কমিশনের প্রধান হিসেবে আছেন ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা এমআই-ফাইভের প্রাক্তন প্রধান জোনাথন ইভান্স। ১৭ জন সদস্যের এই কমিশন পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করে এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের অনুমোদন সাপেক্ষে রাজার আনুষ্ঠানিক নিয়োগের মাধ্যমে আর্চবিশপ নির্বাচিত হন।

উল্লেখ্য, চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান হিসেবে রাজা বা রাণীকে সুপ্রিম গভর্নর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ঐতিহ্যটি এসেছে রাজা অষ্টম হেনরির সময় থেকে, যখন তিনি পোপের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে চার্চের প্রধান ঘোষণা করেন।

এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে জোনাথন ইভান্স বলেছিলেন, তিনি এমন একজন প্রার্থী খুঁজছিলেন যিনি শুধু শ্বেতাঙ্গ, অক্সব্রিজ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বাসিন্দা নন, বরং যিনি চার্চের জন্য সত্যিকারের আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব দিতে পারবেন। এছাড়াও, যিনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দৃঢ়ভাবে খ্রিস্টীয় মতাদর্শের ভিত্তিতে কথা বলতে পারবেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *